‘শ্যুট’ করাটা বজায় থাকুক। তবে চাপ পড়ুক শাটারে, ট্রিগারে নয়। নাগা শিকারিদের কয়েক জনের হাত থেকে বন্দুক সরিয়ে নিয়ে ক্যামেরা তুলে দিল নাগাল্যান্ডের ফাকিম অভয়ারণ্য কর্তৃপক্ষ। উদ্দেশ্য, নাগা গ্রামবাসীদের শিকার-প্রথাকে আইনের ভয় দেখিয়ে নয়, বিকল্প বিনোদনের রাস্তা দেখিয়ে বন্ধ করা।
নাগা গ্রামগুলিতে শিকারকে বেআইনি কাজ বলে মনেই করা হয় না। জঙ্গলে তাদের বংশানুক্রমিক অধিকার এবং শিকারই তাদের বংশগত ঐতিহ্য বলে মনে করেন নাগা গ্রামবাসীরা। তাই প্রায় সব ঘরে সরকার স্বীকৃত বন্দুকও রয়েছে। এমন সমাজ ব্যবস্থায় ‘আধুনিক আইন’-এর ভয় দেখিয়ে শিকার বন্ধ করার চেষ্টা করে লাভ হয়নি। কিফিরে জেলা বন দফতরের বক্তব্য, গ্রামের মানুষদের কাছে আগে শিকার ছিল জীবন ধারণের উপায়। এখন কিন্তু তা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রধান বিনোদন। কারণ প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে টিভি নেই। নেই বিনোদনের অন্য উপকরণ। সে কারণে জোর করে বা ভয় দেখিয়ে নয়, স্বাধীনতাপ্রিয় নাগাদের এ বার উপহার হাতে তুলে দিয়ে মন জয় করার চেষ্টা করছেন নাগাল্যান্ডের বন কর্তারা।
দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় মায়ানমার সীমান্তে অবস্থিত এই অভয়ারণ্য নাগাল্যান্ডের উচ্চতম শৃঙ্গ, মাউন্ট সারামতিকে ঘিরে রয়েছে। হলুদ গলার লাফিং থ্রাস, ব্লিথস ট্র্যাগোপান, স্লেন্ডার বিল্ড ওরিওল, মিসেস হিউম্স ফেজ্যান্ট, নাগা রেন ওয়ার্বলার, পশ্চিমি উল্লুক, মেঘলা চিতাবাঘ, লিফ ডিয়ার, এশিয় কালো ভালুক, জের্ডনস পিট ভাইপার, ভুটান গ্লোরি প্রজাপতি, বেলা র‌্যাটল স্নেক-সহ বিভিন্ন ধরণের পশুপাখির দেখা মেলে ফাকিমের জঙ্গলে। ভারতের দিকে এই অরণ্যের মাত্র সাড়ে ৪ বর্গ কিলোমিটার পড়ে। বাকিটা মায়ানমারের মধ্যে।
গ্রামবাসীদের মধ্যে যে সব যুবক নিয়মিত জঙ্গলে যান, তাঁদের হাতে বন্যপ্রাণ সপ্তাহে ক্যামেরা, দূরবীণ তুলে দেন বনকর্তারা। তাঁদের শেখানো হয় ছবি তোলার কায়দা। চেনানো হয় পাখি। বোঝানো হয়, পাখি মারার চেয়ে তার ছবি তোলায় চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি, আনন্দও বেশি। সেই পাখিকে ফ্রেমে বরাবরের জন্য বন্দি করে রাখা সম্ভব।
শিকার ঠেকাতে ফাকিম, থানামির ও ভোংসুভোং গ্রামগুলিতে নাগাড়ে পরিবেশ সচেতনতা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। কেবল ক্যামেরা নয়, গ্রামবাসীদের হাতে বিভিন্ন খেলার সরঞ্জামও তুলে দিয়েছে বন বিভাগ। বন বিভাগের পাশাপাশি, গ্রামবাসীদের সচেতন করতে এগিয়ে এসেছে স্থানীয় বহু পশুপ্রেমী সংগঠন। এমনকী গির্জা ও গ্রামের প্রবীণরাও গ্রামে শিকার নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে আলোচনা চালাচ্ছে। বন দফতরও মনে করে, শিকার নিষিদ্ধ করার নির্দেশ সরকারের তরফে না এসে গির্জার তরফ থেকে এলেই তা বেশি কার্যকর হবে।