দু’দিন আগেই হোয়াইট হাউসে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন, ভারত-পাক সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতার পথে যাবে না আমেরিকা। কাশ্মীর সমস্যা নিজেদেরই মিটিয়ে ফেলতে হবে তাদের।
পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়িয়ে শুক্রবার ফের বিবৃতি প্রকাশ করল হোয়াইট হাউস। মুখপাত্র এরিক শুল্জ বলেন, ‘‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দেন প্রেসিডেন্ট ওবামা।’’ আর্থিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে দৃঢ় বন্ধনের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘ভারত-মার্কিন অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে ওবামা বিশেষ চেষ্টা করেছেন।’’ এরিক জানিয়েছেন, ওবামারই নির্দেশে হোয়াইট হাউস তথা গোটা প্রশাসন দু’দেশের সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং সম্পর্কের পরিধি বিস্তারের সুযোগ খুঁজতে বিশেষ ভাবে তৎপর হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। বৈঠকে ওবামাকে শরিফ আশ্বাস দেন, লস্কর-ই-তইবা, হক্কানি-সহ রাষ্ট্রপুঞ্জ চিহ্নিত বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীকে পাকিস্তানের মাটি থেকে কার্যকলাপ চালাতে দেওয়া হবে না। পাক-আফগান সীমান্তের দু’দিকেই এই হক্কানি গোষ্ঠী যথেষ্ট সক্রিয়। পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গেও তাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলে দীর্ঘদিন ধরে দাবি করছেন মার্কিন গোয়েন্দারা। পাকিস্তানের মাটি থেকে বহু বার সন্ত্রাসের প্রমাণও মিলেছে। ইসলামাবাদের অদূরেই অ্যাবটাবাদে ঘাঁটি গেড়ে ছিলেন ওসামা বিন লাদেন। এখন আন্তর্জাতিক চাপের মুখেই হক্কানি ও লস্কর নিয়ে মুখ খুলল পাকিস্তান, মনে করছেন কূটনীতিকরা।
তবে চেনা পথে হেঁটে সেই বৈঠকেও কাশ্মীর প্রসঙ্গ খঁুচিয়ে তুলেছিলেন শরিফ। তিনি দাবি করেন, কাশ্মীর নিয়ে ভারতের অনমনীয় মনোভাবের ফলেই দু’দেশের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। দু’দেশের কথাবার্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পাক প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘কাশ্মীর সমস্যার দ্রুত সমাধান হওয়া প্রয়োজন। এবং সেটা হতে পারে কোনও তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায়।’’ আমেরিকাই এই কাজের জন্য আদর্শ, মন্তব্য করেন শরিফ। কিন্তু বৈঠকের পরেই ভারতকে স্বস্তি দিয়ে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র এরিক শুল্জ বলেন, ‘‘শুধু ভারত-পাকিস্তানেই নয়, গোটা এলাকায় শান্তি পরিস্থিতি বজায় রাখতে দীর্ঘমেয়াদি আলোচনা দরকার। কাশ্মীর-সহ বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয়ের তাড়াতাড়ি মীমাংসা হওয়া প্রয়োজন। এবং তা তাদের নিজেদেরই করতে হবে।’’
আমেরিকাকে এ ভাবে পাশে পেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই লুফে নিয়েছে দিল্লি। কালই পাকিস্তানের সমালোচনা করে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেন, ‘‘জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্তরে বৈঠক করতে আমরা সব সময়েই রাজি। ভারত আলোচনার টেবিল থেকে সরে এসেছে, পাকিস্তানের এই দাবি কখনওই মেনে নেওয়া যায় না।’’
এ বছর জুলাই মাসে রাশিয়ার উফায় পাক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর। সেই বৈঠকেই স্থির হয়, শীঘ্রই দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা বৈঠকে বসবেন। ২৪ অগস্ট বৈঠকের দিনও ঠিক হয়। কিন্তু সেই বৈঠকের কয়েক দিন আগেই হুরিয়ত নেতাদের চা-চক্রে ডাকেন নয়াদিল্লিতে পাক হাইকমিশনার আব্দুল বাসিত। পাকিস্তানের এই দু’মুখো নীতিতে বিরক্ত নয়াদিল্লি তখনই সরতাজ আজিজ ও অজিত ডোভালের সেই বৈঠক বাতিল করে দিয়েছিল।
ভারতের স্বস্তি আরও বাড়িয়ে শুল্জ জানান, আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও অসামরিক পরমাণু চুক্তি হচ্ছে না। শুল্জের কথায়, ‘‘আমেরিকা নীতিগত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, পাকিস্তানের সঙ্গে এখন পরমাণু চুক্তি হবে না।’’
আর আজ ওবামা-মোদী ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে মার্কিন প্রশাসন শরিফকে আরও চাপে ফেলে দিল বলেই ধারণা কূটনীতিকদের।
No comments:
Post a Comment