ইস্টবেঙ্গল-১ (অভিনব)
চট্টগ্রাম আবাহনী-৩ (এলিটা-২, হেমন্ত)
চট্টগ্রাম আবাহনী ‘লুন্ঠন’। আর শেখ কামাল আন্তর্জাতিক গোল্ড কাপ নিয়ে ও পার বাংলা থেকে এ পার বাংলায় ফেরা— এই স্বপ্নে শুক্রবার দিনভর মশগুল ছিলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা।
র্যান্টি মার্টিন্স গোলের মধ্যে ফেরায় লাল-হলুদ সমর্থকরা আরও আশাবাদী ছিলেন, র্যান্টি-ম্যাজিকে এক যুগ পর ফের একটা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট জিতে কলকাতায় ফিরবে তাঁদের প্রিয় দল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে ইস্টবেঙ্গল কলকাতা ফিরছে স্বপ্নভঙ্গের তীব্র বেদনা নিয়ে।
কারণ, র্যান্টি আছেন র্যান্টিতেই! আসল দিনে জ্বলে ওঠার বদলে কেমন যেন মিইয়ে রইলেন সারাক্ষণ। আর তাঁর প্রতিপক্ষ দলে দেশোয়ালি নাইজিরিয়ান এলিটা কিংসলে দাপিয়ে বেড়ালেন গোটা ম্যাচ। নিটফল— ফাইনালের শুরুতেই এগিয়ে গিয়েও ১-৩ হেরে বাংলাদেশ থেকে ট্রফি জিতে আসার সুযোগ হাতছাড়া করল বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের দল। গ্রুপ লিগ অভিযান যাদের বিরুদ্ধে ২-১ জিতে শুরু করেছিল লাল-হলুদ, তাদের কাছেই চূড়ান্ত লড়াইয়ের দ্বিতীয়ার্ধে নাস্তানাবুদ হয়ে হারল লাল-হলুদ। তিপ্পান্ন থেকে ছাপ্পান্ন—মাত্র তিন মিনিটে দু’গোল খেয়ে ম্যাচ থেকেই হারিয়ে যান দীপক-ওরোকরা।
অথচ শুরুটা এ দিন ভালই করেছিল ইস্টবেঙ্গল। এগারো মিনিটে অভিনব বাগের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য়ের ছেলেরা। ইস্টবেঙ্গল রাইট ব্যাকের শট আবাহনীর লিটনের মাথায় লেগে দিক পরিবর্তন করে গোলে ঢুকে যায়। তখন একবারও মনে হয়নি এই ম্যাচ হেরে মাঠ ছাড়তে পারে ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু হাফটাইমের বাঁশি বাজার সামান্য আগে আবাহনীর মিঠুনের ক্রস থেকে হেডে বাংলাদেশের ক্লাবকে সমতায় ফেরান তাদের নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড এলিটা।
“ফাইনালে হারায় কষ্ট একটা থাকেই। কিন্তু কোনও কোনও দিন গেমপ্ল্যান কাজ করে না। আজ সেটাই হল।
তবে আই লিগের আগে আমাদের রিজার্ভ বেঞ্চ অনেককে পেল। আপাতত লাভ এটাই।” —বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। |
দ্বিতীয়ার্ধের গোড়ায় জাহিদের ফ্রিকিকে পা ছুঁইয়ে স্থানীয় দলকে এগিয়ে দেন ওই বিদেশিই। দু’মিনিট পরেই ফের গোল খায় লাল-হলুদ রক্ষণ। বেলো-দীপকদের ভুল বোঝাবুঝিতে এলিটার ক্রসে হেডে ৩-১ করে যান হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস।
ম্যাচ শেষে চরম হতাশ অ্যালভিটো ডি’কুনহা ফোনে বললেন, ‘‘প্রথমার্ধের একদম শেষ মুহূর্তে গোলটা হজম করে ছেলেদের কনফিডেন্সটা পরের পঁয়তাল্লিশ নষ্ট হয়ে গেল। তাতেই সব বিপত্তি।’’ চট্টগ্রামের দলটায় শেখ রাসেল থেকে লিয়েনে নেওয়া বেশ কয়েক জন ফুটবলার আছেন। তার সঙ্গে গ্যালারির তুমুল সমর্থন। আর মাঠের ভেতর তাদের দুই সাইডব্যাকের মারাত্মক ওভারল্যাপ। তবু এ সব কিছু প্রথমার্ধে ঠিক মতোই ম্যানেজ করে নিয়েছিল দীপক মণ্ডলরা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে এক বার এগিয়ে যেতেই প্রেসিং ফুটবল খেলতে শুরু করে আবাহনী। বিশ্বজিতের দল এই সময় চেষ্টা করেছিল প্রতি-আক্রমণে রাস্তায় গিয়ে গোল তুলে আনার। কিন্তু র্যান্টি নিষ্প্রভ থাকায় সেই পরিকল্পনা সফল হয়নি। গোলের সুযোগ নষ্ট করেন ওরোক, রফিকরাও।
বাংলাদেশের এই টুর্নামেন্টে প্রথম দিন থেকেই কিপার দিব্যেন্দু, মিডিও প্রহ্লাদ, অবিনাশ, অ্যান্টনি, সাইড ব্যাক অভিনবদের মতো বঙ্গসন্তানরা পারফরম্যান্সের শিখরে ছিলেন। কিন্তু আসল দিনেই সেই বঙ্গসন্তানরা স্বপ্নভঙ্গের শরিক। যদিও লাল-হলুদ কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য সেটা মানতে নারাজ। ফোনে বললেন, ‘‘ফাইনালে হারায় কষ্ট একটা থাকেই। কিন্তু কোনও কোনও দিন গেমপ্ল্যান কাজ করে না। আজ সেটাই হল। তবে আই লিগের আগে আমাদের রিজার্ভ বেঞ্চ অনেককে পেল। আপাতত লাভ এটাই। আমি তো মনে করি এই টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স আই লিগে হতাশার প্রভাব ফেলার বদলে ফুটবলারদের বরং মোটিভেট করবে।’’
No comments:
Post a Comment