অফিসে সাধারণত আপনি কী করেন? এক কথায় উত্তর দিতে হলে— ‘কাজ’! ‘কাজ’ না করেও অফিসে অনেকে মাসের শেষে মাইনে নিয়ে দিব্যি বাড়ি চলে যান ঠিকই, তবে সেই সব বিতর্কে গিয়ে লাভ নেই। আপনি জানেন, আপনি আপনার অফিসকে কতটা দিচ্ছেন এবং বিনিময়ে অফিসও আপনাকে কী দিচ্ছে! তবে, এই দেওয়া-নেওয়ার মাঝেই যে আপনার খাতে চলে আসে অনেকটা ক্লান্তি, সেটা কি অস্বীকার করতে পারেন? ঠিক এই জায়গাতেই অফিস-কালচারে ঘা মেরেছে গুগল! অফিসকেই তারা করে তুলেছে বাড়ি!
যেমন ধরুন, আপনি কি অফিসে আপনার পোষ্যকে নিয়ে যেতে পারেন? বা, খাওয়া-দাওয়ার পর একটু ‘ভাতঘুম’ দেওয়ার অভ্যাস আছে কি আপনার? ওয়ার্ক-আউট করার ইচ্ছে হলে সেই সুযোগ কি আপনাকে অফিস দেয়? কলকাতা-সহ ভারতের অনেক অফিসে জিম আছে ঠিকই, কিন্তু হাতের কাজ না মিটিয়ে সেখানে ঢুঁ মারার কোনও উপায় নেই। গুগল সে সবের ধার-কাছ দিয়েও যায় না! তাদের মূল মন্ত্র কর্মচারীকে স্বাচ্ছন্দ্যে রাখা!
সেই জন্যই গুগলের অফিসে আপনি আপনার সাধের পোষ্যকে নিয়ে যেতে পারেন। নিয়ে যেতে পারেন বাচ্চাদের। ইচ্ছে হলে সেরে নিতে পারেন একটু-আধটু ওয়ার্ক-আউট। কয়েক পাক সাঁতারও কেটে নিতে পারেন কাজের মাঝে। দরকার মতো জামাকাপড়গুলো কেচে নিতে পারেন অফিসের লন্ড্রিতে। এমনকী ক্লান্ত বোধ করলে ঘুমিয়েও নিতে পারেন খানিকটা।
ভাবছেন, এত বড় একটা অফিসের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত কী করে হয়? তার জন্য রঙিন সব সাইকেল, গুগলের নিজস্ব গাড়ি আর লিফট্ তো রয়েছেই। আর রয়েছে এক তলা থেকে অন্য তলায় নামার জন্য স্লিপ। ঠিক যে রকমটা আপনি বাচ্চাদের পার্কে দেখেন, তেমনই। তফাতের মধ্যে তার আকার একটু বড়, এই যা!হেলথ্ চেক-আপ মিটিয়ে নেওয়ার জন্য নিজস্ব হাসপাতাল রয়েছে গুগলের। অবশ্য, শারীরিক সমস্যায় গুগলের কর্মচারীরা খুব একটা ভুগছেন, এমন নজির এখনও পর্যন্ত তেমন ভাবে সামনে আসেনি। আসলে, মন ভাল থাকলে যে শরীরও আপনিই সুস্থ থাকে! সেই কথাটা মাথায় রেখে গুগলের অফিসের অন্দরসাজ কর্মচারীর স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। গুগলের অফিসে তাই একঘেয়ে ডেস্ক সিস্টেম নেই। বদলে রয়েছে আরামে কাজ করার জন্য নিত্য নতুন বসার ব্যবস্থা। পাশাপাশি, কর্মচারীদের সুস্থ রাখার জন্য অফিসের মধ্যেই রয়েছে গুগলের নিজস্ব ফার্ম। সেখানকার টাটকা সব্জি-ডিম-দুধ-মাংস স্বাদকোরক আর স্বাস্থ্য— দুইয়েরই খেয়াল রাখে।
সব মিলিয়েই গুগল তাই সেরা অফিসের শিরোপা আদায় করে নিয়েছে। শুধু বাড়িই নয়, মোটামুটি গোটা দুনিয়াটাকেই তারা বন্দি করে ফেলেছে অফিসের চৌহদ্দিতে!
আর আপনি? ভাবছেন, দিনের শেষে সেই যখন গজগজ করতে করতে হা-ক্লান্ত শরীরটাকে টেনে নিয়ে যেতে হবে বাড়ির পথে, তখন এ সব কথা জেনে লাভ কী?
দেখুন না একটু অপেক্ষা করে! নরেন্দ্র মোদী তো ইতিমধ্যেই ঘুরে এসেছেন গুগলের অফিস থেকে। কে বলতে পারে, নিজের দেশের মানুষকে স্বস্তিতে রাখার জন্য এখানেও হয়তো এমন অফিস-কালচার শুরু করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী!
No comments:
Post a Comment