এক সপ্তাহ আগেও ছিল বর্ষা। হয়ে গেল হেমন্ত। মাঝখান থেকে শরতকালটাই বেমালুম উবে গেল।
একের পর এক নিম্নচাপ, ঘূর্ণাবর্তে বর্ষা দীর্ঘায়িত হতে হতে এবার ছুঁয়ে ফেলল অক্টোবরের ১৯ তরিখ। ঘন ঘন বৃষ্টিতে আর মেঘ ঢাকা আকাশে বর্ষা জুড়েছিল গোটা ভাদ্র আর আশ্বিন। কার্তিকের একেবারে প্রথম লগ্নে উত্তুরে বাতাসে চামড়ায় ধরতে শুরু করেছে টান। ভোরের দিকে শীত শীত ভাব। হাওয়া অফিসের থার্মোমিটার দেখাচ্ছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছে ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা এই সময়ের স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রার থেকে ২ ডিগ্রি কম। সকালে ঘাসের ডগায় শিশিরবিন্দু।
আবহবিদেরা বলছেন, আবহাওয়াটা হেমন্তের। তাহলে শরত কালটা গেল কোথায়?
হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, বিশ্বব্যাপি আবহাওয়া পরিবর্তনের জেরে পূর্ব ভারতে বর্ষাকালের মেয়াদ বাড়ছে। সেপ্টেম্বর ছাড়িয়ে তা নভেম্বরের দোরগোড়া চলে আসছে। তাতে কখনও হেমন্তকালটা বোঝা যাচ্ছে না। কখনও পবে যাচ্ছে শরতকাল। কখনও আবার বর্ষার পরেই চলে আসছে শীত। প্রশান্ত মহাসাগরে তৈরি হওয়া এল নিনো (সমুদ্রের উপরিতলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির অবস্থা) এবং লা নিনা (সমুদ্রের উপরিতলের তাপমাত্রা হ্রাসের অবস্থা)-ই এখন বিশ্বের আহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তাই আবহাওয়ায় কোনও স্থিতাবস্থা থাকছে না।
এবার বর্ষার আগে কেন্দ্রীয় আবহবজ্ঞানমন্ত্রক যে পূর্ভাভাস দিয়েছিল তাতে দেশের বিভিন্ন অংশে খরার আশঙ্কা ছিল। তার জন্য এল নিনোকেই কাঠগড়ায় তুলেছিলেন আবহবিদেরা। কিন্তু জুলাই মাসে সারা দেশে এতটাই বৃষ্টি হয়েছে যে আবহবিজ্ঞান মন্ত্রকের পূর্বাভাস নিয়েই সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। তবে অগস্ট মাস থেকে দেশের পশ্চিম, মধ্য এবং দক্ষিণের কিছু অংশে বৃষ্টিপাত এতটাই কমে গিয়েছিল যে বিভিন্ন এলাকায় খরা ঘোষণা করতে হয়েছে।
আবার পশ্চিমবঙ্গ বিশেষ করে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে কখনও বৃষ্টিতে টান পড়েনি। বঙ্গোসাগরে ঘন ঘন নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণাবর্ত বৃষ্টিকে ধরে রেখেছে সপ্তমীর দিন পর্যন্ত। স্বাভাবিক নিয়মে অক্টোবরের ৮ তারিখ দক্ষিণবঙ্গ থেকে বর্ষা বিদায়নেওয়ার কথা। এবার কিন্তু বর্ষা বিদায় নিয়েছে ১৯ অক্টোবর। তারপরেই পুজোর শেষ দিকে এসে হঠাৎ করে মোড় নিয়েছে আবহাওয়া। তার ফলে এবার পূর্বভারতে কোপ পড়ল শরতে। বর্ষা থেকে একেবারে হেমন্ত। তবে যে উত্তুরে হাওয়াটা এখন বইছে তা কতদিন স্থায়ী হবে, কতদিন ঠান্ডা ঠান্ডা ভাবটা থাকবে তা নিয়েও আবহবিদেরা সন্দিহান। উপগ্রহ চিত্র বঙ্গোপসাগরের উপরে বায়ুপ্রবাহের যে গতিপ্রকৃতি দেখাচ্ছে তাতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আরেক দফা আবহাওয়া পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাচ্ছেন আবহবিদেরা।
কী ভাবে?
কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া একটি নিম্নচাপই হঠাৎ এই আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণ। ওই নিম্নচাপটাই উত্তর ভারত থেকে টেনে আনছে অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা বাতাস। তার ফলে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ঝপ করে অনেকটাই কমে গিয়েছে। ১৯ অক্টোবর কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৫.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার চারদিনের মধ্যে তা একধাক্কায় প্রায় চার ডিগ্রি কমে গিয়েছে। এই তাপমাত্রা কিন্তু য়ে নামতেই থাকবে তা কিন্তু নয়। বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপটির গতিপ্রকৃতি কী হয় তার উপরে আবহাওয়ার পরবর্ত ধাপটি নির্ভর করবে।
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, ‘‘বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপটির চারদিকে বায়ুপ্রবাহের গতিপ্রকৃতি যা তাতে ওই নিম্নচাপটি শক্তি বাড়াতে বাড়াতে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে। যতো নিম্নচাপটি শক্তি বাড়াবে ততোই বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয়বাষ্পপূর্ণ বাতাস ঢুকে পড়বে পরিমণ্ডলে। তাতে ফের বাড়বে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। অস্বস্তিকর আবহাওয়া ফিরে আসতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড়টি কবে কোথায় ধাক্কা মারতে পারে তা আগামী দুই দিনের আগে বলা যাবে না। আগামী এক সপ্তাহের আবহাওয়া পুরোপুরি নির্ভর করছে বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপটির উপরেই।’’
No comments:
Post a Comment