পরিষেবার মান নিয়ে বিএসএনএল গ্রাহকদের অভিযোগের অন্ত নেই। হয় ল্যান্ডলাইন খারাপ দিনের পর দিন, নয়তো মোবাইল ‘সিগনাল’ অমিল। গ্রাহক অসন্তুষ্টির সেই বোঝার উপর শাকের আঁটি জাতীয় সড়কে কাজের জন্য সংস্থাটির অপটিক্যাল ফাইবার কেব্ল (ওএফসি) কেটে মাঝেমধ্যেই গোটা পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে যাওয়া। সমস্যা এতটাই যে, গত পাঁচ মাসে বিএসএনএলের পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলে শুধু এ জন্যই কয়েক হাজার গ্রাহক ল্যান্ডলাইন ছেড়ে দিয়েছেন বলে সংস্থা সূত্রের খবর। ফলে এই সার্কেলকেও প্রচুর লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। ক্ষুণ্ণ হচ্ছে সংস্থার ভাবমূর্তিও।
গ্রাহকের এ ধরনের ভোগান্তি ও ব্যবসার ক্ষতি এড়াতে এ বার তাই পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। নিজেদের ওএফসি-র পাশাপাশি বিকল্প ব্যবস্থায় ফোনের পরিষেবা চালু রাখতে তারা পাওয়ার গ্রিড-এর ‘ওভারহেড’ ওএফসি-ও ভাড়া করছে। পাওয়ার গ্রিডের যে-লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়, তারই মধ্যে থাকা ওএফসি দিয়ে আলাদা ভাবে ফোনের পরিষেবাও দেবে বিএসএনএল-এর পশ্চিমবঙ্গ সার্কেল। মাস দেড়েকের মধ্যে গোটা ব্যবস্থা চালু হবে বলে আশা সংস্থা-কর্তাদের। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মতো দেশের কিছু এলাকায় এই ব্যবস্থায় ফোনের পরিষেবা চললেও পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম তা চালু হবে।
নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিএসএনএলের পরিষেবার মান নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। পাশাপাশি জলের লাইন বা বিদ্যুতের লাইনের কাজের জন্য মাটির তলায় সংস্থাটির ওএফসি কেটে গেলেও পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। কলকাতায় এ রকম ঘটনায় বারবারই অন্য সংস্থা বা স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তোলে ক্যালকাটা টেলিফোন্স।
অন্য দিকে, জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণ বা রাস্তার অন্য কাজের জন্য একই ভাবে ভুক্তভোগী বিএসএনএল-এর পশ্চিমবঙ্গ সার্কেল। রাজ্যে পরিষেবা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন এলাকার মধ্যে সংস্থার ওএফসি-র আলাদা আলাদা ‘লিঙ্ক’ রয়েছে। তার মধ্যে কলকাতা থেকে আসানসোল, দুর্গাপুর, বহরমপুর এবং রায়গঞ্জ থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত চারটি ‘লিঙ্ক’ রাস্তার কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংস্থা সূত্রের খবর, ওই সব এলাকায় সপ্তাহে গড়ে প্রায় দু’বার করে কেব্ল কাটা পড়ছিল। গোটা এলাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ল্যান্ডলাইন, ব্রডব্যান্ড, মোবাইল পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। মেরামতির পরে ফের তা শুরু হলেও কেব্ল কাটার ঘটনা ঘটছিল বারবার। ফলে গত এপ্রিল থেকে অগস্টের মধ্যে শুধু আসানসোল-দুর্গাপুর এলাকাতেই ল্যান্ডলাইন-ব্রডব্যান্ড-মোবাইল ফোন মিলিয়ে সার্বিক ভাবে বিএসএনএলের পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলে ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কলকাতা-বহরমপুর ‘লিঙ্ক’ একই সমস্যায় পড়লেও ক্ষতির বহর কিছুটা কম, প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা।
শুধু টাকার অঙ্কে লোকসানই নয়, পরিষেবা বন্ধ থাকায় তিতিবিরক্ত গ্রাহকদের অনেকেই বিএসএনএল সংযোগ ছাড়েন। যা সংস্থার ভাবমূর্তিতে ধাক্কা দেয়। সংস্থা সূত্রের খবর, এই সময়ের মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার গ্রাহক তাঁদের ল্যান্ডলাইন ছেড়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে ৩০-৩৫ শতাংশের ক্ষেত্রে এই সমস্যাই দায়ী বলে মনে করছেন পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলের কর্তারা।
সংস্থার রাজ্য সার্কেলের চিফ জেনারেল ম্যানেজার (সিজিএম) কিশোর কুমার জানান, মাটির তলার ওএফসি কেটে গেলে বিকল্প ব্যবস্থায় পরিষেবা চালু রাখতে পাওয়ার গ্রিডের পরিকাঠামো ব্যবহারের প্রস্তাব দেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘পাওয়ার গ্রিডের ওএফসি উপর দিয়ে যাওয়ায় মাটির নীচের কেব্ল কাটা পড়লেও পরিষেবা চালু থাকবে।’’ তাঁদের আশা, এ ভাবে নিরবচ্ছিন্ন পরিষেবার নিশ্চয়তা পেলে পুরনো গ্রাহকদের ফের ঘরে ফেরানো যাবে। নতুন গ্রাহকেরাও আগ্রহী হবেন বিএসএনএলের সংযোগ নিতে ।
কুমার জানান, মালদহ-শিলিগুড়ি-কলকাতা, এই ‘রুট’-এ পাওয়ার গ্রিডের ওএফসি ব্যবহারের জন্য সদর দফতরের সায় পেয়েছেন তাঁরা। আশা, বাকি ‘রুট’-গুলিতেও সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে চূড়ান্ত সম্মতি মিলবে। সায় মেলার পরে পুরো ব্যবস্থা কার্যকর হতে দেড়-দু’মাস সময় লাগে বলে জানান তিনি।
No comments:
Post a Comment