অন্ধকার চিরে সমুদ্রের ঢেউয়ের মাথা ছুঁয়ে এই প্রথম রাত্রিবেলা বিমান নামল পোর্ট ব্লেয়ারে।
বিষয়টি আদৌ সহজ ছিল না। রানওয়ের এক দিকে পাহাড়, অন্য দিকে সমুদ্র। পাহাড়ের দিক দিয়ে ওঠানামা করা যায় না। সমুদ্র থেকে মাঝেমধ্যে বেসামাল হাওয়া এলোমেলো করে দেয় বিমানবন্দরকে। হাওয়ার গতির সামান্য ভুলচুক হলে পাহাড়ে আছড়ে পড়তে পারে বিমান।
মঙ্গলবার তাই প্রথমে পরীক্ষামূলক ভাবে চালানো হল এই বিমান। একেবারে ফাঁকা সেই বিমানের ককপিটের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হল এমন এক পাইলটের হাতে, যিনি ২০০৪ সালে সুনামি মাথায় করে নেমে পড়েছিলেন পোর্ট ব্লেয়ারে। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর পোর্ট ব্লেয়ারের রানওয়েতে তখন একের পর এক চিড় দেখা দিচ্ছে। ওই অবস্থায় বিমান নিয়ে সেখান থেকে টেক-অফও করেছিলেন ক্যাপ্টেন জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে রাতে পোর্ট ব্লেয়ারে নামার ক্ষেত্রে তাঁর ওপরই ভরসা করেছেন এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ। গত এপ্রিলেই দিল্লি থেকে পোর্ট ব্লেয়ারের উড়ান চালু করেছে তারা। সেই উদ্বোধনী উড়ানে ছিলেন বিমানমন্ত্রী গজপতি রাজু আর ককপিটে জয়দীপ।
এই মুহূর্তে কলকাতা, চেন্নাই, দিল্লি থেকে নিয়মিত উড়ান রয়েছে পোর্ট ব্লেয়ারের। পোর্ট ব্লেয়ার বিমানবন্দর সূত্রের খবর, সকাল দশটা পর্যন্ত হাওয়ার প্রকোপ থাকে না। তাই এয়ার ইন্ডিয়া-সহ সমস্ত বিমান সংস্থাই চেষ্টা করে সকাল সাড়ে ন’টার মধ্যে পোর্ট ব্লেয়ারে পৌঁছে আধ ঘণ্টার মধ্যে সেখান থেকে টেক-অফ করে যেতে। জয়দীপ বলেন, ‘‘টেক-অফ, ল্যান্ডিং দুই ক্ষেত্রেই বিপরীতমুখী হাওয়ার দরকার হয়। সকাল দশটার পর পোর্টব্লেয়ারে হাওয়ার দিক বদলাতে শুরু করে। তখন সেখান থেকে ওঠা-নামা করাটাই মুশকিল হয়ে যায়।’’ হাওয়ার এই দাপট চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এখন রাতে যদি বিমান ওঠানামা করতে শুরু করে, তা হলে সকালের ওই সময়টা সবাই মিলে ভিড় করবে না। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের আশা, সে ক্ষেত্রে উড়ানের সংখ্যা বাড়বে। প্রত্যন্ত আন্দামানের সঙ্গে দেশের মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগও বাড়বে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের রিজিওনাল ডিরেক্টর শুদ্ধসত্ত্ব ভাদুড়ি জানান, রাতে বিমান ওঠানামার জন্য রানওয়েতে পর্যাপ্ত আলো লাগানো হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও বিমানসংস্থা রাতে বিমান চালাবে বলে লিখিত ভাবে জানায়নি। তাঁর কথায়, ‘‘৪৫০ কোটি টাকা দিয়ে নতুন টার্মিনাল বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে। পরবর্তী কালে এই বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে তুলে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
No comments:
Post a Comment