আর কয়েকটা দিন সবুর করুন, মঙ্গলই হয়ে উঠবে আমাদের ঘর-বাড়ি! আমাদের জমিজিরেত, কাঠ, কংক্রিট- সব থাকবে মঙ্গলে!
শুধু তার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া বা, তার কক্ষপথে চক্কর মেরে চলে আসা নয়। শুধু দু’-এক দিনের জন্য তার মাটিতে নেমে হাঁটাহাঁটি, গবেষণার পর ফের পৃথিবীতে ফি                 রে আসাও নয়। একেবারে পাকাপাকি ভাবেই সেখানে থাকতে যাবে মানুষ। সেখানেই থাকবে মানুষের ভিটে-                          মাটি! ঘর-বাড়ি!
              লাল গ্রহের জল-মাটি-মিথেন গ্যাস আর সাগরের জলের নুনই হয়ে উঠবে আমাদের এই নীল গ্রহের বাসিন্দাদের                          পরিচিত পরিবেশ। আমাদের বেঁচে থাকার জল-বায়ু। ‘নেক্সট-জেন হিউম্যান সিভিলাইজেশান’!
             তার জন্য অনন্ত প্রতীক্ষারও দরকার নেই। আর কয়েকটা দশক। তার পর মঙ্গলেই গড়ে উঠবে মানবসভ্যতার ‘দ্বিতীয়               উপনিবেশ’!
              মহাকাশবিজ্ঞান গবেষণার পথিকৃৎ সংস্থা নাসা-ই এ কথা জানিয়েছে। আর, পনেরো বছরের মধ্যেই লাল গ্রহে মানুষ                  হাঁটবে বলে নাসার তরফে আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল।
                 এ বার বলা হল, ২৫ বছরের মধ্যে কী ভাবে মানবসভ্যতার ‘দ্বিতীয় উপনিবেশ’টা মঙ্গলে গড়ে তোলা যায়, তার                   যাবতীয় পরিকল্পনা, প্রয়ুক্তি-প্রকৌশল আর নকশাও তিরিশের দশকের মধ্যেই চূড়ান্ত করে ফেলা হবে।
               খাতায়-কলমে নাসা সেই পরিকল্পনার ‘ব্লু-প্রিন্ট’ প্রাথমিক ভাবে প্রকাশ করেছে সদ্য প্রকাশিত একটি ডকুমেন্টে। যার                 নাম- ‘নাসা’স জার্নি টু মার্স-পাইওনিয়ারিং নেক্সট স্টেপ্‌স ইন স্পেস এক্সপ্লোরেশান’।
                         
                          কোনও উল্লম্ফন নয়। নাসা চায়, ধাপে ধাপে এগতে। অন্তত, তিনটি পর্যায়ে।প্রথম ধাপটির নাম-‘আর্থ রি                        ল্যায়্যান্ট’। মানে, লাল গ্রহে মানুষের ‘দ্বিতীয় উপনিবেশ’ গড়ে তোলার যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা-প্রস্তুতির                       কিছুটা হবে পৃথিবীতেই। গবেষণাগারে। মহাকাশচারীদের ‘ট্রেনিং ক্যাপসুলে’। তবে, বেশির ভাগটাই হবে                             পৃথিবীর ৩৭০ কিলোমিটার উপরে, মহাকাশে থাকা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে।
                       দ্বিতীয় পর্যায়টির নাম- ‘প্রুভিং গ্রাউন্ড’। এর অর্থ, বিভিন্ন সময়, দিনে বা রাতে বা, বিভিন্ন পার্থিব ‘                            ঋতু’তে সুগভীর মহাকাশে মহাকাশচারীদের পাঠিয়ে দেখা হবে, মঙ্গলের পরিবেশ, জল-বায়ু কখন, কতটা                           সহনীয় হচ্ছে মানুষের পক্ষে। এই পর্যায়টি এমন ভাবে করা হবে, যাতে মহাকাশচারীদের প্রয়োজনে, খুব তাড়াতাড়ি এ               ই গ্রহে ফিরিয়ে আনা যায়। এটা আদতে, মঙ্গলে বসতি গড়ার আগে, ‘প্র্যাকটিস পিরিয়ড’।আর, শেষ ধাপটিতে যাবতীয়             পার্থিব নির্ভরতাকে ‘গুড বাই’ জানানো হবে। এই পর্যায়টির নাম- ‘আর্থ ইন্ডিপেন্ডেন্ট’। যখন মানুষ গিয়ে                      কিছু দিন করে থাকতে শুরু করবে লাল গ্রহে। শুরু হবে ‘বন কেটে বসত’! সেই ধাপে, নাসা বলছে, মানুষ চাষবাসও                করবে লাল গ্রহে গিয়ে। জীবাশ্ম জ্বালানির খোঁজ-তল্লাশ করবে। জল শোধন করে তা পানযোগ্য করে তুলবে। আর,                   আমাদের এই নীল গ্রহের বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়মিত ও দ্রুত যোগাযোগ রাখার জন্য গড়ে তুলবে একেবারে সর্বাধুনিক                 যোগাযোগ ব্যবস্থা।
                সেই যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক কেমন হবে?
              নাসা বলছে, আমাদের এই নীল গ্রহের কোনও রাম, শ্যাম, যদু, মধুর পাঠানো মেসেজের জবাব লাল গ্রহে                                     মানবসভ্যতার ‘দ্বিতীয় উপনিবেশ’ থেকে পাওয়া যাবে।
                    শুধু একটু সবুর করতে হবে। দূরত্বটা যে একটা ‘ফ্যাক্টর’। মঙ্গলের মানুষের জবাব আমাদের কাছে পৌঁছতে                       সময় নেবে ২০ মিনিট।