সন্ত্রাসের               আঁতুড়ঘর আর শুধু আফগানিস্তান-পাকিস্তান নয়। বরং গোটা বিশ্বের আতঙ্কের এখন নয়া নাম আইএস। এবং তার ছোবল যখন এ বার ভারতেও আছড়ে পড়ার আশঙ্কা ঘনাচ্ছে, তখন মোকাবিলায় জর্ডনের হাত শক্ত করার অঙ্গীকার করল নয়াদিল্লি।
দু’দিনের আম্মান সফরে এসে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিলেন, মৌলবাদী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একেবারে সামনের সারিতে থাকা জর্ডনকে সাহায্য করতে কোনও কার্পণ্য করবে না ভারত। আজ রাজা আবদুল্লা, প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লা এনসুর-সহ জর্ডনের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা থেকে প্রতিনিধি স্তরের বৈঠক, সর্বত্রই সন্ত্রাস দমনের কথা তুলেছে ভারত। এমনকী বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জর্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতাতেও প্রাধান্য পেয়েছে সন্ত্রাস দমনে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রসঙ্গ।
নয়াদিল্লির তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সন্ত্রাস দমনে সব ধরনের সাহায্য দিতে তৈরি তারা। তবে মুসলিম বিশ্ব থেকেই আর্থিক মদত পাচ্ছে আইএস। তা থামাতে জর্ডন দৌত্য শুরু করুক। জর্ডনে আসা সিরিয়ার শরণার্থীদের জন্য কয়েক লক্ষ ডলার আর্থিক সাহায্য দিয়েছে ভারত। জর্ডনের তরফে রাজা আবদুল্লাও জানিয়েছেন, তাঁর দেশ কখনও মৌলবাদের পথে হাঁটবে না।
সাউথ ব্লক সূত্রের খবর, আইএস ভারতের পক্ষেও বড় বিপদ। কারণ, তাদের দাপটে পশ্চিম এশিয়ায় ভারতীয়দের কাজ করতে আসার পথে বাধা তৈরি হয়েছে। আবার ইন্টারনেটে প্রচারের ফলেও আইএসে আকৃষ্ট হচ্ছেন ভারতীয় মুসলিম যুবকদের একাংশ। সম্প্রতি ভারতে হামলার হুমকিও দিয়েছে ওই জঙ্গিগোষ্ঠী।
আবার ইরাক-সিরিয়ার পাশের দেশ হিসেবে জর্ডনে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আঁচ সরাসরি পড়েছে। ওই লড়াইয়ে সরাসরি সামিল রাজা আবদুল্লার দেশ। সে দেশের বায়ুসেনার এক পাইলটকে বন্দি করে পুড়িয়েও মেরেছিল জঙ্গিরা। আবার সিরিয়া থেকে ১৪ লক্ষ শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন জর্ডনে। তাই এই বিষয়ে আম্মানের সঙ্গে সহযোগিতায় বিশেষ আগ্রহী ভারত।
জর্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট সম্মান গ্রহণের পরে রাষ্ট্রপতি বলেন, “সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জে দেওয়া বক্তৃতায় সন্ত্রাস দমনে সাত সূত্রের দাওয়াই দিয়েছেন রাজা আবদুল্লা। তার সঙ্গে নয়াদিল্লি পুরোপুরি এক মত। সন্ত্রাস থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করার যে ডাক দিয়েছেন আবদুল্লা, তা নয়াদিল্লিরও নীতি।’’
আম্মানে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত অনিল ত্রিগুনায়েত জানিয়েছেন, সন্ত্রাসের মোকাবিলায় জর্ডন কতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তা সম্প্রতি ধরা পড়েছে রানি রানিয়ার বক্তব্যে। প্যারিসে দাঁড়িয়ে আইএসকে রুখতে গোটা মুসলিম সম্প্রদায়কে ডাক দিয়েছিলেন তিনি। রানিয়া স্পষ্টই জানিয়েছিলেন, ওই মৌলবাদীদের রুখতে উদারপন্থী মুসলিমরা বিশেষ কিছু করছেন না।
কিন্তু জর্ডন যে চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না তা স্পষ্ট। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কার আনার চেষ্টা করছেন রাজা আবদুল্লা। মৌলবাদের যাতে নামগন্ধ না থাকে সে জন্য পাঠ্যক্রম বদলেরও চেষ্টা চলছে। যুব সম্প্রদায়ের কর্মসংস্থান বাড়ানোরও চেষ্টা করছে জর্ডন সরকার।