আন্তর্জাতিক ম্যাচে অনভ্যস্ত মাঠের অব্যবস্থা নিয়ে চাপা বিরক্তি। সাংবাদিক সম্মেলনে অধিনায়কের মেজাজ হারানো। সর্বোপরি টিমের এক নম্বর স্পিনারের চোট এবং তা নিয়ে ধোঁয়াশা।
রবিবার ওয়ান ডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ হারের সঙ্গে এই তিন কাঁটাও বিঁধে থাকল টিম ইন্ডিয়ার গ্রিন পার্ক অধ্যায়ে।
অশ্বিন সবে নিজের চার নম্বর ওভারটা করছেন। বল আটকাতে গিয়ে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। যন্ত্রণাক্লিষ্ট চোখমুখ নিয়ে দুটো ডেলিভারি করলেও তার পর ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা বলে মাঠ থেকে বেরিয়ে যান অশ্বিন। পরে এবি ডে’ভিলিয়ার্সের তাণ্ডব দেখে সাইডলাইনে নিজেকে পরীক্ষা করে ৩৮ নম্বর ওভারটা বল করতে ফের মাঠে ঢোকেন। খেলতে খেলতে চোট না পাওয়ায় আইসিসির নিয়মে তখনই বল করার অনুমতি পাননি অশ্বিন। নিয়ম মতো অপেক্ষা করেও অবশ্য এক ওভারের বেশি বল করতে পারেননি অশ্বিন। যার পরপর ভারতীয় বোর্ডের তরফে ইমেল বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অশ্বিনের সাইড স্ট্রেন হয়েছে। সম্পূর্ণ মেডিক্যাল পরীক্ষার পরে বলা হবে, চোট সারতে কত দিন লাগবে।’ পরের দুটো ওয়ান ডে-তে তাঁর বদলি হিসেবে হরভজন সিংহের নামও ঘোষণা করে দেওয়া হয়। ইনদওরেই টিমের সঙ্গে যোগ দেবেন পঞ্জাবের অফস্পিনার।
কানপুরে থাকলে হরভজন দেখতে পেতেন, আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্লর ঘরের মাঠের বেহাল দশা। তারকা বোঝাই একজোড়া টিম সামলাতে সেখানে নিরাপত্তার ছড়াছড়ি। তবু দিনের শেষে বজ্রআঁটুনি, ফস্কা গেরো। ম্যাচের আগের দিন টিম ইন্ডিয়ার প্র্যাকটিসে যেমন দেখা গেল, প্লেয়ার-পিছু অন্তত আধ ডজন ‘বাউন্সার’ মোতায়েন করা হয়েছে। অথচ একগাদা ভিড় ঠেলে যখন সাংবাদিক সম্মেলন করতে আসছেন ধোনি, তাঁর জন্য বরাদ্দ শুধু একজন পুলিশ অফিসার। যিনি ভিড় সামলানোর চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহী ধোনির সঙ্গে সেলফি তুলতে! যে কর্তারা মিডিয়ার দায়িত্বে, তাঁদের একজনকে দেখা গেল চুপিসাড়ে ধোনির চেয়ারের পিছনে গিয়ে অপেক্ষারত কোনও এক সঙ্গীকে ইঙ্গিত করতে— অব ফটো লে লো! সেলফির সর্বত্র বিরাজমান আবদার থেকে দক্ষিণ আফ্রিকানরাও ছাড়া পাননি। প্র্যাকটিসের পর ঠায় রোদ্দুরে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে ছবি তোলাতে তোলাতে ডেভিড মিলারের মুখের পেশি যদি বেশ কয়েক দিন ওই এক অভিব্যক্তিতে আটকে থাকে, অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না!
যা দেখে বেশ বিরক্ত দুই টিমের ম্যানেজমেন্ট। ভারতের নবনিযুক্ত তরুণ মিডিয়া ম্যানেজার ক্রিকেট থেকে কয়েক আলোকবর্ষ দূরের উটকো সব প্রশ্ন আটকাতে জেরবার। উল্টো দিকে দক্ষিণ আফ্রিকান সাংবাদিক সম্মেলনে টিমের সাহেব নিরাপত্তারক্ষীকে রীতিমতো হুমকি দিতে শোনা গেল, প্লেয়ারদের বক্তব্য রেকর্ড করতে তাঁদের সামনে রাখা মোবাইলের একটাও যদি বেজে ওঠে, সেটা সপাটে ঘরের বাইরে ফেলে দেওয়া হবে। তাঁর কথা ক’জন বুঝল, কে জানে। প্রশ্নোত্তর পর্ব সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সেলফি-পর্ব চলতেই থাকল।
ধোনিকে এ দিনও স্থানীয় এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করে বসলেন, রোহিত শর্মা আর বিরাট কোহলির সম্পর্ক নাকি খুব খারাপ? কানপুরের টিম হোটেলেই নাকি দু’জনের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে? এটা সত্যি, না গুজব? শুনে ভারত অধিনায়কের তৎক্ষণাৎ পাল্টা, ‘‘আরে, গুজব রটানোই তো আপনাদের কাজ। কোথায় খবর লিখবেন, তা নয়। চা খেতে খেতে চায়ের স্বাদটা ভাল লাগল না, তো বিরক্ত হয়ে ভাবতে বসে গেলেন, আজ ইন্ডিয়ার কার বারোটা বাজানো যায়? এ সব ছেড়ে আগে নিজের কাজটা বুঝুন না!’’
যা শুনে একটা ব্যাপারে অন্তত নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। ব্যাটের ধার হারাতে পারে, মহেন্দ্র সিংহ ধোনির শ্লেষ এখনও ক্ষুরের মতো তীক্ষ্ণ!
No comments:
Post a Comment