রাতের কালো আকাশ ঢেকে উড়ে আসছে একটার পর একটা, ওড়িশা ক্রিকেটের কর্তা-আধা কর্তারা দৌড়চ্ছেন মাঠের দিকে। বাউন্ডারি লাইনের আশেপাশে তখন সব শুয়ে পাশাপাশি। সংখ্যাটা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ওগুলো সব বোতল, জলের বোতল।
ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রডের চোখ মোটামুটি বিস্ফারিত। কী করবেন, কী ভাবে করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। ম্যাচের দুই আম্পায়ারকে ডাকলেন। দু’টো টিমকে ড্রেসিংরুমে পাঠিয়ে দিয়ে দ্রুত আম্পায়ারদের সঙ্গে বৈঠক ডেকে নিলেন বাউন্ডারি লাইনের ঠিক বাইরেটায়। রাত দশটা বাজে, আরও গোটা সাতেক ওভার করাতে হবে, কিন্তু ম্যাচটা আর শুরু করা যাবে কি না, সেটাই তো বলা যাচ্ছে না! কারণ নিরীহ নয়, বোতলগুলো অধিকাংশ জলভর্তি। যার কোনওটা আছড়ে পড়ছে পুলিশের মাথায়, কোনওটা সপাটে উড়ে আঘাত করছে ক্যামেরাম্যানের লেন্সে! ঝুঁকি কে নেবে? প্লেয়ারদের লেগে গেলে কে বাঁচাবে? হিসেব বার করে ফেলা হল যে, ম্যাচ শুরু করা না গেলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে জয়ী ঘোষণা করে দেওয়া হবে। ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে। বাধ্য হয়ে যার প্রয়োগ ঘটাতে হবে বৃষ্টিতে নয়, বোতল-বৃষ্টিতে।
পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে ঘোষকের গলা মোটামুটি বসে যাওয়ার জোগাড়। উৎকল ভাষায় ক্রমাগত তিনি বলেই চলেছেন, এ বার থামান আপনারা। দয়া করে ম্যাচটা শুরু হতে দিন। আর দয়া! জঙ্গি সমর্থককুলের মেজাজ এতটা উগ্র যে, উপায় না দেখে শেষ পর্যন্ত ফাঁকা করে দিতে হল গ্যালারির একাংশ। রীতিমতো পুলিশ পাঠিয়ে আধ ঘণ্টা অপেক্ষার পর শুরু করতে হল ম্যাচ। শুরু করতে হল লাঠিচার্জের ভয় দেখিয়ে।
সোজাসুজি বললে, সোমবারের মহানদী পাড়ের ক্রিকেট স্টেডিয়াম এক সঙ্গে জোড়া ক্রিকেট-কলঙ্কের সাক্ষী হয়ে থাকল। বাইশ গজে যদি মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের ন্যক্কারজনক ব্যাটিংয়ে কলঙ্কের প্রথম অধ্যায় লেখা হয়ে থাকে, তা হলে তার সর্বশেষ অধ্যায় লিখে ফেললেন কলিঙ্গরাজ্যের ক্রিকেট-দর্শক। ম্যাচ থামিয়ে, ক্রিকেটকে কলুষিত করে। বঙ্গভূমিতে অবস্থিত কোনও এক ইডেন গার্ডেন্সের অতীত লজ্জাকে মনে পড়িয়ে। কয়েক ঘণ্টা দূরত্বের প্রতিবেশী রাজ্যেও তো ঘটেছে এমন। ’৯৬ বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল ওখানে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হয়েছিল মাঝপথে। এশীয় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত-পাক যুদ্ধ শেষ করতে জনশূন্য করে দিতে হয়েছিল ইডেন গ্যালারি। সচিন রমেশ তেন্ডুলকরের অনুরোধেও সে বার লাভ হয়নি। ঠিক যেমন এ দিন বিরাট কোহলিকে ঘুরে-ঘুরে জলের বোতল মাঠের বাইরে ফেলতে দেখেও বরাবাটি দর্শকের মন ভিজল না।
ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রডের চোখ মোটামুটি বিস্ফারিত। কী করবেন, কী ভাবে করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। ম্যাচের দুই আম্পায়ারকে ডাকলেন। দু’টো টিমকে ড্রেসিংরুমে পাঠিয়ে দিয়ে দ্রুত আম্পায়ারদের সঙ্গে বৈঠক ডেকে নিলেন বাউন্ডারি লাইনের ঠিক বাইরেটায়। রাত দশটা বাজে, আরও গোটা সাতেক ওভার করাতে হবে, কিন্তু ম্যাচটা আর শুরু করা যাবে কি না, সেটাই তো বলা যাচ্ছে না! কারণ নিরীহ নয়, বোতলগুলো অধিকাংশ জলভর্তি। যার কোনওটা আছড়ে পড়ছে পুলিশের মাথায়, কোনওটা সপাটে উড়ে আঘাত করছে ক্যামেরাম্যানের লেন্সে! ঝুঁকি কে নেবে? প্লেয়ারদের লেগে গেলে কে বাঁচাবে? হিসেব বার করে ফেলা হল যে, ম্যাচ শুরু করা না গেলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে জয়ী ঘোষণা করে দেওয়া হবে। ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে। বাধ্য হয়ে যার প্রয়োগ ঘটাতে হবে বৃষ্টিতে নয়, বোতল-বৃষ্টিতে।
পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে ঘোষকের গলা মোটামুটি বসে যাওয়ার জোগাড়। উৎকল ভাষায় ক্রমাগত তিনি বলেই চলেছেন, এ বার থামান আপনারা। দয়া করে ম্যাচটা শুরু হতে দিন। আর দয়া! জঙ্গি সমর্থককুলের মেজাজ এতটা উগ্র যে, উপায় না দেখে শেষ পর্যন্ত ফাঁকা করে দিতে হল গ্যালারির একাংশ। রীতিমতো পুলিশ পাঠিয়ে আধ ঘণ্টা অপেক্ষার পর শুরু করতে হল ম্যাচ। শুরু করতে হল লাঠিচার্জের ভয় দেখিয়ে।
সোজাসুজি বললে, সোমবারের মহানদী পাড়ের ক্রিকেট স্টেডিয়াম এক সঙ্গে জোড়া ক্রিকেট-কলঙ্কের সাক্ষী হয়ে থাকল। বাইশ গজে যদি মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের ন্যক্কারজনক ব্যাটিংয়ে কলঙ্কের প্রথম অধ্যায় লেখা হয়ে থাকে, তা হলে তার সর্বশেষ অধ্যায় লিখে ফেললেন কলিঙ্গরাজ্যের ক্রিকেট-দর্শক। ম্যাচ থামিয়ে, ক্রিকেটকে কলুষিত করে। বঙ্গভূমিতে অবস্থিত কোনও এক ইডেন গার্ডেন্সের অতীত লজ্জাকে মনে পড়িয়ে। কয়েক ঘণ্টা দূরত্বের প্রতিবেশী রাজ্যেও তো ঘটেছে এমন। ’৯৬ বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল ওখানে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হয়েছিল মাঝপথে। এশীয় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত-পাক যুদ্ধ শেষ করতে জনশূন্য করে দিতে হয়েছিল ইডেন গ্যালারি। সচিন রমেশ তেন্ডুলকরের অনুরোধেও সে বার লাভ হয়নি। ঠিক যেমন এ দিন বিরাট কোহলিকে ঘুরে-ঘুরে জলের বোতল মাঠের বাইরে ফেলতে দেখেও বরাবাটি দর্শকের মন ভিজল না।
রাত বারোটায় প্রেস কনফারেন্স রুমের বাইরে দেখা গেল, অন্তত শ’খানেক মানুষ জটলা করে দাঁড়িয়ে। সঙ্গে অশ্রাব্য গালিগালাজ চলছে নিরন্তর। এঁদের যন্ত্রণা হল, এই প্রথম মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এ মাঠে দেশের ক্যাপ্টেন্সি করবেন এত ঘটা করে ম্যাচের আগে বারবার ঘোষণা করা হল। আর সেখানে কি না পয়সা খরচ করে এই জিনিস দেখতে হল!
ক্রিকেটীয় যুক্তিতে যে বক্তব্য অদ্ভুত। কিন্তু আবেগের ব্যারোমিটার ধরলে তো পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়াও যায় না। টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে এত জঘন্য ব্যাটিং প্রদর্শন এমএসডির টিম দেখিয়েছে আট বছর আগে। মেলবোর্নে মাত্র ৭৪ রানে অস্ট্রেলিয়ার সামনে শেষ হয়ে যাওয়ার দিন। তার পর আজ, আবার। এবং ক্রিকেট দেবতার নিষ্ঠুর পরিহাসে দু’টোর মধ্যে একটা যোগসূত্রও আছে। আট বছর আগে ঠিক ১৭.২ ওভারে সমাধিস্থ হয়েছিল ভারতীয় ব্যাটিং। আট বছর পরেও তাই ঘটল। সিরিজে জীবন-মৃত্যুর ম্যাচে ধোনিদের ব্যাটিংয়ের অন্ত্যেষ্টি ঘটে গেল ওই একশো চার বলেই! ফারাকের মধ্যে রানটা এ দিন একটু বেশি উঠেছে। ৭৪-এর জায়গায় ৯২!
বিপর্যয়ের নেপথ্য খলনায়ক হিসেবে তুলে আনতে পারেন বরাবাটি পিচকে। বলতে পারেন, বাইশ গজ যে বিভ্রান্তিকর সেটা টসের সময় দুই অধিনায়কই বলে গিয়েছিলেন। এমন ভ্রমাত্মক উইকেটে টস জেতাটা প্রবল গুরুত্বপূর্ণ। ভাগ্যের যে সাহায্য দক্ষিণ আফ্রিকার ফাফ দু’প্লেসি পেয়েছেন। ভারতের ধোনি পাননি। বলতে পারেন, এত অল্প টার্গেট তুলতে গিয়ে ডে’ভিলিয়ার্সরাও বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন। মুশকিল হল, সে যুক্তিকে খুব ধারালো দেখাবে না। কারণ পিচ আর যা-ই হোক, প্লেয়ারের শট নির্বাচন ঠিক করে না।
ধোনি অবশ্য সিরিজ হেরেও হাসছেন।
ধোনিদের অপরাধ যে কারণে অমার্জনীয়। পাড়ার ক্রিকেটেও ফুলটস বলে বোল্ড হলে ব্যাটসম্যানের দিকে বাছা বাছা বিশেষণ ভেসে আসে। অম্বাতি রায়ডু একই ঘটনাটা ঘটালেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। বোল্ড হওয়ার ভঙ্গিমা দেখলে হায়দরাবাদিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তৎক্ষণাৎ দু’বছরের নির্বাসনে পাঠিয়ে দিতে ইচ্ছে করবে! ইনি নাকি অজিঙ্ক রাহানের ‘পারফেক্ট রিপ্লেসমেন্ট’! ধোনি-জমানার এখন নিয়ম হল, ম্যাচের পর ম্যাচ কোহলির পর ভারতীয় ক্রিকেটের একমাত্র শ্রীযুক্ত নির্ভরযোগ্য বসে থাকবেন। অর্থাৎ, রাহানে। আর স্নেহধন্য হায়দরাবাদি খেলে যাবেন ম্যাচের পর ম্যাচ, করবেন পাঁচ কিংবা টেনেটুনে সাত। ম্যাচ শুরুর প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে ভারতীয় ব্যাটিং বিপর্যয় ঠিক কতটা কদর্য ছিল, তার ব্যাখ্যায় রায়ডু ও তাঁর অধিনায়কের উদাহরণ ব্যবহার করলেই চলবে। অ্যালবি মর্কেল বোধহয় দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারবেন না যে, অফস্টাম্পের অত বাইরের বলে কেউ তাঁকে উইকেট দিতে পারে। ভারত অধিনায়কের শরীর থাকল কটকে, ব্যাটটা গেল ভুবনেশ্বরে! আর কানায় চুমু লেগে খোঁচাটা ডে’ভিলিয়ার্সের নিরাপদ গ্লাভসে। ২৮-১ থেকে টিমটা দশ ওভারে দাঁড়াল ৪৫-৪। কয়েক মিনিটে ৬৭-৫ এবং শেষে ৯২-এ লজ্জার সমাপ্তি। এর পরে বোতল ছুড়লে কিছু বলার থাকে? বা গালিগালাজ চললে?
কোহলি, রোহিতদের ব্যাটিং ব্যর্থতার হতাশা মাঠে বোতল ছুড়ে মেটাল বরাবাটি।
আসলে একটা কথা বোধহয় খোলাখুলি বলে দেওয়ার সময় এসেছে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির অতীতের ‘দে ঘুমাকে’ ব্যাটিং, ধুরন্ধর অধিনায়কত্ব দু’টোই এখন ক্ষয়িষ্ণু। মাঝে মধ্যে এখন তিনি এমন সব জিনিস ঘটিয়ে ফেলেন, যার সঙ্গে পুরনো ধোনিকে মেলাতে গেলে কষ্ট হয়। গত আইপিএল থেকে তাঁর যে ব্যাটিং ফর্ম নিম্নগামী, তা আজও উপরের সিঁড়ি ধরল না। তাঁর ফাটকাও এখন আর কাজ করে না। ধর্মশালা জানে, শ্রীনাথ অরবিন্দের সঙ্গে কী ঘটেছে। আর কটক ফুঁসতে-ফুঁসতে দেখল, পনেরো জনের স্কোয়াডে অশ্বিন বাদে উইকেট নেওয়ার বোলার একজনই ছিল। তিনি অমিত মিশ্র। অথচ তিন স্পিনারের ছকে গিয়েও কী অবলীলায় অমিতকে বসিয়ে হরভজনকে নামালেন ধোনি। চলে গেলেন দুই অফস্পিনারে। কটক দেখল, গত ম্যাচে পাঁচে নেমেও প্রয়োজনের দিনে ধোনি নিজেকে নামিয়ে দিলেন ছ’নম্বরে। অসহ্য চাপের মুখে পাঠিয়ে দিলেন রায়ডুকে। বলাবলি কিন্তু চলবে যে, ধোনি-যুগ সমাপ্তির দিকে এ বার এগোচ্ছে কি না? এটাও বলা হবে যে, ভারতে এসে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভারতকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছেন দু’প্লেসিরা। একবার সাত উইকেটে, একবার ছ’উইকেটে। রোহিত শর্মার সেঞ্চুরি-টেঞ্চুরি কেউ মনেই রাখবে না।
দুঃখ শুধু একটা জায়গায়। বঙ্গ ক্রিকেট মনে করেছিল, তাদের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর বিপর্যয়ে কিছুটা প্রলেপ দিতে পারে ৮ অক্টোবরের ম্যাচ। ভেবেছিল, কটকে সমতা ফিরিয়ে ইডেনে ঢুকবে ভারত। তার পর সিরিজ জিতবে। যোগ্য সম্মান দেবে জগমোহন ডালমিয়ার ক্রিকেটপ্রেমের। খারাপ লাগলেও লিখতে হবে যে, ডালমিয়ার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যেই ইডেন আবার শ্মশান হয়ে গেল। উত্তেজনার ম্যাচের স্বপ্ন দেখিয়েও তা দাঁড়াল এখন নিয়মরক্ষার। মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা যেখানে ঢুকে পড়বেন আজ, মঙ্গলবার।
লজ্জা আর কলঙ্ককে সঙ্গে নিয়ে!
No comments:
Post a Comment