সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ক্রমেই আরও জটিল হয়ে উঠছে। এই গৃহযুদ্ধে নতুন মাত্রা জুড়েছে রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি। দামাস্কাসে নিজের সামরিক ক্ষমতা ধীরে ধীরে বাড়িয়ে চলেছে রাশিয়া। এ নিয়ে তীব্র আপত্তি জানালেও আপাতত কিছু করার নেই আমেরিকার। সম্প্রতি সিরিয়ার আকাশে রাশিয়ার ড্রোন উড়তেও দেখা গিয়েছে বলে পেন্টাগন সূত্রে খবর। যদিও ড্রোনগুলিতে অস্ত্র ছিল না। সেগুলি আপাতত পর্যবেক্ষণের কাজেই ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বরাবরই প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের পক্ষ নিয়েছে রাশিয়া। অস্ত্র দিয়ে সাহায্যও করেছে। এক দিকে রয়েছে ইসলামিক স্টেট, অন্য দিকে আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দেশগুলির সাহায্য নিয়ে লড়াই করা বিদ্রোহীরা। আর এই দুইয়ের মাঝে ইরান ও রাশিয়ার যৌথ সাহায্যে এখনও ক্ষমতায় টিকে আছেন বাসার আল আসাদ। কিন্তু, সম্প্রতি আসাদের শক্তি হ্রাস পাচ্ছে বলে খবর। ইরান আর সে ভাবে আসাদের পাশে দাঁড়াচ্ছিল না। ফলে ক্রমেই আরও দুর্বল হয়ে পড়ছিল আসাদ সরকার। এর পরেই দামাস্কাসে রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যেতে থাকে। আপাতত ছোট হলেও ধীরে ধীরে দামাস্কাসে সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে রাশিয়া।
পেন্টাগন সূত্রে খবর, দামাস্কাসের কাছে লাটাকিয়া অঞ্চলে আপাতত ২৫টি যুদ্ধবিমান, ১৫টি হেলিকপ্টার, ন’টি ট্যাঙ্ক, তিনটি ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ও বেশ কিছু ড্রোন মোতায়ন করেছে রাশিয়া। রয়েছে প্রায় ৫০০ সেনাও। এখনও সরাসরি গৃহযুদ্ধে অংশ না নিলেও যুদ্ধবিমান ও ড্রোন নিয়মিত উড়ছে। এ নিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব অ্যাস্টন কার্টারের সঙ্গে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সার্গেই সোইগুর-র কথাও হয়েছে। সেখানে আসাদকে রাশিয়ার এই সমর্থন নিয়ে আমেরিকার আপত্তির কথা জানিয়েছেন কার্টার। কিন্তু, তার পরে আলোচনা বেশি দূর এগোয়নি। এর মধ্যে দামাস্কাসে রাশিয়ার দূতাবাসে মর্টার আক্রমণ হয়। এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় রাশিয়া।
প্রশ্ন উঠেছে, রাশিয়া আসাদকে সমর্থন করে গৃহযুদ্ধে অংশ নিলে কার বিরুদ্ধে লড়াই করবে। ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর বিরুদ্ধে লড়াই হলে আমেরিকার অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু, আইএস ছাড়া আসাদ বিরোধী অন্য গোষ্ঠীর উপরে রাশিয়া আক্রমণ শানালে আমেরিকা-সহ পশ্চিমী বিশ্বের কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, আসাদ বিরোধী অন্য গোষ্ঠীগুলিকে আমেরিকা-সহ পশ্চিমী বিশ্ব সরাসরি সমর্থন করছে। তা ছাড়া, সিরিয়ায় আসাদের কোনও ভবিষ্যৎ নেই বলেই মনে করে আমেরিকা। তাই আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে আসাদের সঙ্গে কোনও আলোচনাও করেনি আমেরিকা। কিন্তু, এখনও আসাদকেই সিরিয়ার শাসক বলে মনে করে রাশিয়া। ফলে সংঘাতের ক্ষেত্র প্রস্তুত আছে।
পাশাপাশি, অন্য আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। সিরিয়ার বেশ কয়েকটি জায়গায় মার্কিন বায়ুসেনা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার বায়ুসেনার সঙ্গে তাদের মোলাকাত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কী ঘটবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছে পেন্টাগন। তাই রাশিয়ার সেনার প্রতিটি পদক্ষেপের দিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে।