ছোট্ট একটা ফিয়াট। হুডখোলা ধূসর-কয়লা রঙের এবং একেবারেই সাদামাঠা। হোয়াইট হাউসের লনে এত ছোট গাড়ি সম্ভবত এ বারই প্রথম। আপ্যায়ন তবু যথারীতি। রাজকীয় এবং ত্রুটিহীন। রঙিন পতাকায় ঝলমল করছে আকাশ। রাস্তার পাশে সার দিয়ে অন্তত হাজার পনেরো হাসি-হাসি মুখ। আতিথ্যের উষ্ণতা মিলিটারি ব্যান্ডের কলতানেও। এরই মধ্যে গাড়ি থেকে নামলেন অতিথি। পদক্ষেপ ধীর অথচ বলিষ্ঠ। হাসি-মুখে তাঁকে সম্ভাষণ জানাতে এগিয়ে এলেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট। খানিক হেঁটে দু’জনেই এসে উঠে দাঁড়ালেন লাল কার্পেটে ঢাকা নীল-সাদা মঞ্চে। তত ক্ষণে উৎসবের মেজাজ হোয়াইট হাউস জুড়ে। ঐতিহাসিক ফ্রেমে পাশাপাশি পোপ ফ্রান্সিস আর ওবামা।
ছ’দিনের প্রথম মার্কিন সফরে গত কালই ওয়াশিংটনের বাইরে অ্যান্ড্রুজ বায়ুসেনা ঘাঁটিতে পা রাখেন পোপ ফ্রান্সিস। আর আজ এলেন হোয়াইট হাউসে। গত কাল মিশেল ও দুই মেয়েকে নিয়ে ওবামা নিজে যান পোপকে স্বাগত জানাতে। আর আজ, পোপের ফিয়াট হোয়াইট হাউসে ঢোকার আগেই ওবামা টুইট করেন, ‘‘হোয়াইট হাউসে আপনাকে স্বাগত পোপ। আপনার আশা, ভালবাসা আর শান্তির আমাদের প্রত্যেকের অনুপ্রেরণা।’’
আরও অনেকের মতো অতিথির অপেক্ষায় হোয়াইট হাউসের সিকিউরিটি গেটের বাইরে কাল সারা রাত জেগে কাটিয়েছেন ওয়াশিংটনের বছর তিরিশের ডাক্তারি ছাত্র কিম্বারলি জনসন। আজ তাই পোপকে চোখের সামনে দেখে আবেগ সামলাতে পারলেন না। বলেই ফেললেন, ‘‘এত ‘কুল’ পোপের কথা জন্মে শুনিনি। দেখতে পাওয়া তো স্বপ্নের মতো!’’
পোপকে ঘিরে একই রকম উন্মাদনা আজ দেখা গিয়েছে মার্কিন ক্যাথলিক নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর সমাবেশের সময়েও। তবে পোপ ফ্রান্সিস হোয়াইট হাউসে এসে কী বলেন, সে দিকেই কান রেখেছিল আমেরিকার আম জনতা থেকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের একটা বড় অংশ। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে দু’জনের একান্ত বৈঠকে যে রাজনৈতিক কোনও আলোচনা হবে না, তার ইঙ্গিত গত কালই মিলেছিল। কিন্তু হোয়াইট হাউসে হাজার পনেরো দর্শক-শ্রোতার সামনে পোপ মুখ খুলতেই বোঝা গেল, তিনি নিজে না চাইলেও আগামী ক’দিন রাজনীতি তাঁর সফরসঙ্গী হচ্ছেই।
কী বললেন পোপ? প্রথমেই বিঁধলেন জলবায়ু পরিবর্তনে দায়ী কারণগুলিকে। দেশে বায়ুদূষণ কমাতে ওবামা যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তার প্রশংসা করার পরেই বললেন— ‘‘এই লড়াইয়ের শেষটা আমাদেরই দেখে যেতে হবে। যা করার পরবর্তী প্রজন্ম করবে— এই ধারণা মনের মধ্যে পুষে রাখার কোনও মানে হয় না।’’ কিউবার সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টায় পোপ যে ভূমিকা নিয়েছেন, তারও ভূয়সী প্রশংসা করেন ওবামা।
কিন্তু বিয়ে-পরিবারের মতো সনাতন ঐতিহ্যের পক্ষ নিয়ে তিনি মুখ খুলতেই বিতর্কের সূত্রপাত। মার্কিন কূটনীতিকদের একাংশ বলছেন, পোপের সঙ্গে এ নিয়ে ক্যাথলিক বিশপ এবং কনজারভেটিভরা সহমত হলেও, হুল ফুটবে লিবারেলদের। দেশের শীর্ষ আদালত সম্প্রতি সমলিঙ্গের বিবাহে অনুমোদন দিয়েছে। তাই এমন একটা সময়ে দাঁড়িয়ে পোপ কী ভাবে ‘সনাতন’ ঐতিহ্য আঁকড়ে থাকার কথা বলেন, প্রশ্ন উঠছে অন্দরে। ওভাল হাউসে ওবামা-পোপের কী আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। আগামী কাল পোপ যাবেন মার্কিন কংগ্রেসে। শুক্রবার রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি বিশেষ অধিবেশনেও যাওয়ার কথা পোপের। ছ’দিনে আমেরিকার তিনটি শহরে পোপের এই সফরে এই দু’টিই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তাঁরা। ফের কী বোমা ফাটান
তাঁর ‘কুল’ পোপ, তাকিয়ে জনসনরাও।