Friday, November 20, 2015

জঙ্গিদের পছন্দে ভারত ছয়ে

আতঙ্ক বাড়িয়ে ‘গ্লোবাল টেরোরিজম ইনডেক্স’-এ ষষ্ঠ স্থান পেল ভারত!
‘ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট অব ইকনমিক্স অ্যান্ড পিস’ প্রতিষ্ঠানের একটি সমীক্ষায় ধরা পড়েছে গোটা বিশ্বে ১৬৫টি দেশের মধ্যে জঙ্গিদের পছন্দের তালিকায় ভারত ছ’নম্বরে। এ দেশে গত এক বছরে জঙ্গি হানায় মারা গিয়েছেন ৪১৬ জন। আগের বছরগুলির তুলনায় যে সংখ্যাটা ১.২ শতাংশ বেশি। উল্লেখযোগ্য, ওই তালিকায় চারে রয়েছে পাকিস্তান। আর পঞ্চম স্থানে সিরিয়া। প্যারিসে হামলার পর গোটা বিশ্ব যখন সন্ত্রাস-আতঙ্কে ভুগছে, তখন এমন একটা রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসায় চিন্তায় পড়েছে নয়াদিল্লি।
সন্ত্রাসের এই আবহেই আজ দিল্লিতে পা দিলেন ফরাসি বিদেশমন্ত্রী ল্যঁরা ফঁবিও। সরকারি ভাবে তাঁর আসার কারণ, প্যারিসের আসন্ন উষ্ণায়ন সংক্রান্ত সম্মেলনের সলতে পাকানো। সম্মেলনে যোগ দিতে আগামী ৩০ নভেম্বর ফ্রান্স সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সূত্রের খবর, ওই সম্মেলনের ক্ষেত্র প্রস্তুতি ছাড়াও আইএস দমনে ফ্রান্সের পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে মোদী ও বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনায় বসবেন ফঁবিও। ভারত সফরে এসে ফরাসি প্রতিনিধিদল আশ্বাস দিয়েছে, জঙ্গি হানার জেরে সাময়িক ভাবে প্যারিসের জনজীবন ধাক্কা খেলেও নভেম্বরের শেষে ওই সম্মেলনের আগেই ঠিক ছন্দে ফিরে আসবে তাঁদের দেশ। ওই সফরে গিয়ে সম্মেলনে যোগ দেওয়া ছাড়াও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে মোদীর।
আগামিকাল ফঁবিও-র সঙ্গে ভারতীয় শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠকে সন্ত্রাস কতটা গুরুত্ব পাবে? এ প্রসঙ্গে, বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ আজ বলেন, ‘‘ফ্রান্সের ঘটনায় ভারত উদ্বিগ্ন। নিরাপত্তা সহযোগিতা উন্নত করতে কী কী করা সম্ভব, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তায় উভয়পক্ষই।’’
ওয়াশিংটনের রিপোর্টে গোটা বিশ্বে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের জন্য মূলত দায়ী করা হয়েছে আইএসকে। পিছিয়ে নেই নাইজেরিয়ার জঙ্গি সংগঠন বোকো হারামও। রিপোর্ট অনুযায়ী, সারা বিশ্বের মোট সন্ত্রাসের অর্ধেকের পিছনে রয়েছে ওই দুই সংগঠন। যাদের জন্য গোটা বিশ্বে সন্ত্রাস হানায় প্রাণহানি বেড়েছে আশি শতাংশেরও বেশি। ভারতে জঙ্গি হামলার পিছনে রয়েছে মূলত লস্কর-ই-তইবা ও হিজবুল মুজাহিদিনের মতো সংগঠনগুলি।
তবে এদের সঙ্গে নতুন দোসর হয়েছে আইএস। মূলত ইন্টারনেটকে হাতিয়ার করে যারা নিজেদের মৌলবাদী ভাবধারার জাল বুনছে এ দেশেও। ইন্টারনেটের এই সর্বগ্রাসী প্রভাব সম্পর্কে আজ সতর্ক করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের নতুন মনোনীত প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরও। সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত একটি বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘সাইবার অপরাধ দমন করা এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপরাধীরা এখন সব সময় এক ধাপ এগিয়ে থাকছে। এই পরিস্থিতিতে সকলকে এক সঙ্গে লড়তে হবে।’’
সর্বাত্মক লড়াই যে প্রয়োজন তার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সরব বিদেশমন্ত্রক। বিশেষ করে এ দেশে যে ভাবে আইএস ডালপালা ছড়াতে শুরু করেছে, তাতে ভারতের পক্ষে একা এর বিরোধিতা করা সম্ভব নয়।
প্রয়োজন আন্তর্জাতিক জোট। বিকাশের কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যখন যে দেশে গিয়েছেন, সেখানেই নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাস প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
পশ্চিম এশিয়া, সংযুক্ত আরব আমির শাহী, বাংলাদেশ, ব্রিটেন—সর্বত্রই নিরাপত্তা সমন্বয়ের বিষয়টি অগ্রাধিকার পেয়েছে তাঁর সফরে।’’ ফ্রান্স এবং পশ্চিমের দেশগুলির কাছ থেকে এ ব্যাপারে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, পেশাদারি দক্ষতা বাড়ানো ও গোয়েন্দা তথ্যের সমন্বয়ের উপরে ভবিষ্যতে জোর দিতে চলেছে ভারত। 

No comments:

Post a Comment