পশুপাখির ভিড়ে নাজেহাল চিড়িয়াখানা!
সৌজন্যে ‘সংরক্ষণ-মুখী’ নাগাল্যান্ডবাসী। চিড়িয়াখানায় অতিরিক্ত প্রাণীর খরচের বোঝা বইতে, সেগুলিকে দত্তক দেওয়ার পথে হাঁটল নাগাল্যান্ড সরকার।
এক দশক আগে নাগাদের কাছে শিকারই ছিল সব চেয়ে বড় বিনোদন। ঝোপঝাড়, রাস্তায় পশুপাখি দেখলেই হল। তির বা গুলিতে তা মেরে হেঁসেলে নিয়ে যাওয়াই ছিল দস্তুর। দিন বদলেছে। এক দিকে নাগারা ‘আমুর ফ্যালকন’ সংরক্ষণ করে ভক্ষক থেকে রক্ষক হয়ে ওঠার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন। তেমনই বন দফতরের আবেদনে সাড়া দিয়ে জঙ্গল ছেড়ে বেরিয়ে আসা প্রাণীদের না মেরে, চিড়িয়াখানায় জমা দিয়ে আসছেন।
এ সবের জেরে বছরে গড়ে একশো পশুপাখি, সরীসৃপ জমছে চিড়িয়াখানায়। রাস্তায় বেরিয়ে আসা সাপ, জঙ্গলের বাইরে দাঁড়ানো হরিণ, পোকা খেতে আসা প্যাঙ্গোলিন, ঘরের চালে বিশ্রাম নেওয়া বাঁদর—কেউই জঙ্গলে ফিরতে পারছে না। দেখামাত্রই তাদের পাকড়াও করে চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শ’খানেক প্রাণীকে নিয়ে ঘর করা নাগাল্যান্ডের রাঙাপাহাড় চিড়িয়াখানায় এখন আবাসিকের সংখ্যা সাড়ে তিনশো ছাড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি জমা পড়েছে ভালুক, অজগর, কচ্ছপ, শেয়াল, বন বিড়াল, হরিণ, সজারু, পেঁচা, ময়ূর, ধনেশ।
এ দিকে, চিড়িয়াখানার বরাদ্দ সীমিত। তা বাড়েনি। জমা পড়া অতিরিক্ত এতগুলি পশুপাখির খাবার জোগাড় করতে তাই নাজেহাল হচ্ছেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি সামলাতে এ বার জমা দেওয়া প্রাণীদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব আম-জনতার হাতে তুলে দিতে চাইছে তারা।
নাগাল্যান্ডের প্রধান মুখ্য বনপাল লোকেশ্বর রাও মাদিরাজু জানান, যে কোনও ব্যক্তি বা সংগঠন প্রাণীদের দত্তক নিয়ে তাদের বার্ষিক খাওয়া ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বহন করতে পারেন। সেই টাকায় চিড়িয়াখানায় ওই প্রজাতির প্রজননের চেষ্টাও চালানো হবে। প্রতিটি পশু বা পাখির জন্য নির্দিষ্ট দত্তক-মূল্য বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে এক বছরের জন্য দত্তক নিতে হবে। পরের বছর দত্তক পূনর্নর্বীকরণ করালেই চলবে।
ধর্মপ্রাণ নাগাল্যান্ডে আমুর সংরক্ষণে ঈশ্বর ও যিশুর দোহাই দেওয়ায় কাজ হয়েছিল ম্যাজিকের মতো। তাই, দত্তক প্রকল্পে জনতার মন টানার ক্ষেত্রেও একই পথ নেওয়া হয়েছে। প্রাণীদের ভালবাসা ও তাদের রক্ষণাবেক্ষণের পক্ষে বাইবেলের কোন অংশে কী বার্তা দেওয়া হয়েছে— তা তুলে ধরা হয়েছে বন দফতরের বার্তায়।
তবে, দত্তক নেওয়া মানেই যে মালিকানা নয়— তা স্পষ্ট করে দেন লোকেশ্বরবাবু। তিনি বলেন, ‘‘প্রাণীটি চিড়িয়াখানার সম্পত্তিই থাকবে। ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার বিনিময়ে প্রাণীর উপরে মালিকানা ফলানো চলবে না। দত্তক নেওয়ার পর ব্যক্তি বা সংগঠনকে সংশ্লিষ্ট প্রাণীর ছবি-সহ বিবরণ, একটি শংসাপত্র, প্রতি মাসে এক বার চিড়িয়াখানায় আসা ও গাড়ি রাখার প্রবেশপত্র দেওয়া হবে। খাঁচার বাইরে লাগানো থাকবে দত্তক নেওয়া ব্যক্তি বা সংগঠনের নাম।’’
No comments:
Post a Comment