ইয়েমেনের লড়াইয়ে ফের বলি হলেন ভারতীয়েরা। আজ সৌদি আরবের জিজান এলাকায় পাল্টা হামলা চালায় ইয়েমেনের হুথি জঙ্গিরা। তাতে এক ভারতীয়-সহ চার জন নিহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যেও রয়েছেন ২ জন ভারতীয়।
ইয়েমেনে লড়াই শুরু হওয়ার পরে সে দেশ থেকে ভারতীয়দের সরিয়ে আনার জন্য বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছিল ভারতীয় নৌ ও বায়ুসেনা। কিন্তু তার পরেও সে দেশে ভারতীয়দের উপস্থিতি মাঝে মধ্যেই নরেন্দ্র মোদী সরকারকে প্যাঁচে ফেলছে বলে স্বীকার করছেন বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারাই।
ইয়েমেনের নির্বাসিত প্রেসিডেন্ট আবেদ রাব্বো মনসুর হাদির বাহিনীর সঙ্গে লড়াই চলছে শিয়া হুথি জঙ্গি এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আলি আব্দুল্লা সালেহের অনুগামীদের। হাদির হয়ে আসরে নেমেছে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন কয়েকটি আরব
দেশের জোট।
আজ সৌদি হানার জবাবে ইয়েমেনের সীমান্ত ঘেঁষা জিজান এলাকার একটি হাসপাতালে মর্টার ছোড়ে হুথি জঙ্গিরা। তাতে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন কেরলের বাসিন্দা ফারুক। তিনি সৌদি আরবে মেকানিকের কাজ করতেন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন বিহারের মহম্মদ সাদিক ও কেরলের সানি টমাস।
ইয়েমেনের লড়াই শুরু হওয়ার পরে ‘অপারেশন রাহত’ নামে অভিযানের মাধ্যমে সেখান থেকে ১৫ হাজার ভারতীয়কে সরিয়ে আনে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু তার পরেও সেই রণক্ষেত্র থেকে ভারতীয়দের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি ইয়েমেনের হোদেইদা বন্দরে চোরাচালানকারীদের উপরে সৌদি বিমানহানায় ৬ জন ভারতীয় নিহত হন।
বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা জানাচ্ছেন, আজ সৌদি আরবে পাল্টা হানায় ভারতীয়েরা হতাহত হয়েছেন। সৌদি আরব থেকে নাগরিকদের সরানোর কথা ভাবা হয়নি। তবে ইয়েমেনে এখনও ভারতীয়দের উপস্থিতি যে মাঝে মাঝেই কেন্দ্রকে অস্বস্তিতে ফেলছে তা স্বীকার করছেন তাঁরাও।
কূটনীতিকদের মতে, ইয়েমেন-সহ পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে কাজ করতে যাওয়া ভারতীয়েরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়লেও অনেক সময়েই দেশে ফিরতে চান না। কারণ, ওই দেশগুলিতে তাঁরা যে পরিমাণ অর্থ রোজগারের সুযোগ পান তা দেশে পাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। অনেক ক্ষেত্রে প্রাণ বিপন্ন করেই পরিবারকে টাকা পাঠানোর মরিয়া লড়াই লড়েন তাঁরা। এক কূটনীতিকের কথায়, ‘‘কেরল থেকে যাওয়া নার্সদের কথাই ধরুন। অনেকেই প্রচুর টাকা ঋণ নিয়ে নার্সিং-এর কোর্স করেছেন। বিপদের ভয়ে পশ্চিম এশিয়া ছেড়ে এলে ঋণ শোধ করা নিয়ে বড়় বিপদে পড়বেন তাঁরা।’’
ইয়েমেন থেকে ফেরানো ভারতীয়দের বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেওয়া যায় কিনা, রাজ্যগুলিকে তা খতিয়ে দেখতে বলেছিল কেন্দ্র। কিন্তু তাতে বিশেষ সুবিধে হয়নি। কারণ, এই ধরনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার কোনও আইন নেই।
তাই ফিরে আসা অনেকেই আবার ইয়েমেন-লিবিয়ায় ফিরে যাচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ কিছু দিন আগে টুইট করে ভারতীয়দের ওই রণক্ষেত্রগুলিতে ফিরে না যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতে যে বিশেষ কাজের কাজ কিছু হয়নি তা মেনে নিচ্ছেন কূটনীতিকেরা। অন্য দিকে আবার ভারতীয়দের ফিরে যাওয়া আটকানোরও কোনও আইন নেই দেশে। এই িবষয়টিও ভাবাচ্ছে নয়াদিল্লিকে।
তবে কেবল বৈধ নয়, ওই অঞ্চলে অবৈধ নানাবিধ কাজেও অনেক ভারতীয় যুক্ত বলে মেনে নিচ্ছেন কূটনীতিকেরা। সোমালিয়া থেকে সক্রিয় তেল চোরাচালানের বড় চক্রে অনেক ভারতীয় যুক্ত রয়েছেন বলে জানতে পেরেছেন দিল্লির গোয়েন্দারা। কূটনীতিকদের মতে, এই ধরনের কাজে যুক্ত নাগরিকদের সরকারি হিসেবে দেখানো যায় না। কিন্তু
তাঁরা নিহত হলে অনেক ক্ষেত্রে ভারতীয় বলে স্বীকার করা ছাড়া উপায় থাকে না।