মাধ্যমিকে যতগুলি বিষয় আছে, তার মধ্যে অঙ্ক নিয়ে উৎকণ্ঠা বেশি। কিন্তু ভাল ফল করতে চাইলে ভয়টাই কাটিয়ে উঠতে হবে আগে।
ভীতি কাটাও
• প্রথমেই বলি, গণিতের যে কোনও শাখার সমস্যাগুলি সমাধান করার সময় সমস্যাটিকে বারবার যুক্তি দিয়ে ভাল ভাবে বুঝতে হবে। না বুঝে মুখস্থ করার মতো সমাধান করলে চলবে না। বুঝতে না পারলে প্রয়োজনে শিক্ষক বা অভিভাবকদের সাহায্য নাও। হাল ছেড়ো না।
• একটা সমস্যা এক ভাবে সমাধান করার পর চেষ্টা করে দেখতে হবে অন্য ভাবে এর সমাধান করা যায় কি না। আবার যে কোনও একটা অধ্যায়ের সমস্যাগুলি একটি নির্দিষ্ট বই থেকে সমাধান করার পর সেই সংক্রান্ত সমস্যা অন্য বই, টেস্ট পেপার থেকে সমাধান করে যেতে হবে। এই ভাবে বারবার অনুশীলন করার পর যে কোনও সমস্যা অনায়াসে সমাধান করতে পারবে। এতে আনন্দ পাবে তখন। ভীতি কেটে যাবে এই ভাবে।
• পরিমিতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সূত্রের প্রয়োগ করতে হয়। এক্ষেত্রে সূত্রগুলি ভাল ভাবে দখল রাখতে হবে।
পরিচ্ছন্ন উত্তরপত্র
• উত্তরপত্রটি যথাসম্ভব পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যাতে উত্তরপত্র মূল্যায়ণ করতে পরীক্ষকের কোনও অসুবিধা না হয়। এখন থেকেই টেস্ট পেপার দেখে পরীক্ষার মহড়া দেওয়া শুরু করলে খাতা সাজানোর মানসিকতা তৈরি হবে।
• গণিত প্রশ্নে দু’টি অংশ থাকে—প্রথম অংশ ও দ্বিতীয় অংশ। প্রথম অংশের উত্তর মূল উত্তরপত্রের প্রথম দু’টি পৃষ্ঠায় করার কথা। তবে উত্তরপত্রের অন্য পৃষ্ঠায় করলেও চলবে। এক্ষেত্রে প্রথম দু’টি পৃষ্ঠা ব্যবহার করাই ভাল। যে কোনও প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় অবশ্যই প্রথমে বাঁ দিকে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের প্রশ্ন সংখ্যা লিখে নিয়ে তবে শুরু করতে হবে। যেমন 3 (a), 4(b) (1) ইত্যাদি। এটা যেন কখনওই ভুল না হয়।
• উত্তর শুরু করার আগে উত্তরপত্রের প্রতি পৃষ্ঠায় ডান দিকে মার্জিন টেনে রাখতে হবে। প্রয়োজন বোধে গণনাকার্যগুলি ওই মার্জিনে পরিষ্কার করে লিখে দেখাতে হবে। এগুলি কেটে দেওয়া চলবে না। যেমন, কোনও প্রশ্ন সমাধান করার ক্ষেত্রে
59 x 67-এর মান নির্ণয় করতে হলে এই হিসাবটি ডান দিকের মার্জিনে কষে দেখাতে হবে। অন্য কোথাও করা যাবে না। ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না। তবে, ছোট গণনা হলে মনে মনে করে ফেলতে পারো। বড় গণনার ক্ষেত্রে সেই চেষ্টা না করাই ভাল।
59 x 67-এর মান নির্ণয় করতে হলে এই হিসাবটি ডান দিকের মার্জিনে কষে দেখাতে হবে। অন্য কোথাও করা যাবে না। ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না। তবে, ছোট গণনা হলে মনে মনে করে ফেলতে পারো। বড় গণনার ক্ষেত্রে সেই চেষ্টা না করাই ভাল।
• প্রশ্নপত্র পড়ার জন্য ১৫ মিনিট অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ থাকে। এই সময়ে প্রশ্নপত্রটি ভাল ভাবে মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। তারপর যে প্রশ্নগুলো সহজ মনে হবে, সেগুলো আগে করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত সহজ প্রশ্নগুলি আগের ১৫ মিনিটে চিহ্নিত করে রাখলে সুবিধা হয়।
গণিতের খুঁটিনাটি
পাটিগণিত ও বীজগণিত
• যদি প্রশ্নপত্রে কোনও বিশেষ পদ্ধতির উল্লেখ না থাকে তবে, যে কোনও যুক্তিমূলক পদ্ধতিতে করা যাবে। কিন্তু বিশেষ পদ্ধতির উল্লেখ থাকলে নির্দিষ্ট সেই পদ্ধতিতেই সমাধান করতে হবে। বীজগণিতের সমাধানের ক্ষেত্রে যদি অপনয়ন পদ্ধতির উল্লেখ থাকে, তবে অপনয়ন পদ্ধতিতেই সমাধান করতে হবে, অন্য পদ্ধতিতে নয়। বিশেষ পদ্ধতির উল্লেখ না থাকলে পাটিগণিতের ক্ষেত্রে বীজগাণিতিক পদ্ধতিও প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে বীজগাণিতিক পদ্ধতিতে সমাধানের ক্ষেত্রে অজ্ঞাত রাশি বা রাশিগুলি সম্পর্কে স্পষ্ট উল্লেখ করতে হবে। যেমন, মনে করি ক-এর গতিবেগ ঘণ্টায় x মাইল। এখানে অজ্ঞাত রাশি xকে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হল।
• বীজগণিতে সমাধানের ক্ষেত্রে প্রতি লাইনে ‘অথবা’ না হয় ‘বা’ লিখতে হবে। এই ব্যাপারে সাবধান না হলে উত্তর ঠিক হলেও পূর্ণ নম্বর পাওয়া যাবে না।
• লেখচিত্র অঙ্কনের ক্ষেত্রে প্রথমেই অক্ষদ্বয়কে এবং মূল বিন্দু ঠিক ভাবে চিহ্নিত করে নিতে হবে। এরপর x, y-এর যুগপৎ মানগুলির তালিকা খাতায় লিপিবদ্ধ করতে হবে। আর লেখচিত্রটি যাতে পরিচ্ছন্ন হয়, সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। অসমীকরণের ক্ষেত্রে সমাধান অঞ্চলটি ঠিক ভাবে চিহ্নিত করতে হবে। এর জন্য বাড়িতে বারবার অভ্যাস প্রয়োজন।
জ্যামিতি
জ্যামিতির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট প্রশ্নের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিচ্ছন্ন চিত্র অবশ্যই আঁকতে হবে। চিত্র ছাড়া কোনও জ্যামিতিক প্রমাণ গ্রাহ্য হবে না। এবং সেক্ষেত্রে কোনও নম্বরও পাওয়া যাবে না। জ্যামিতির প্রশ্নে যদি বিশেষ কোনও চিত্রের প্রতীকের উল্লেখ থাকে, তবে উত্তরের ক্ষেত্রেও সেই বিশেষ প্রতীক ব্যবহার করতে হবে। অন্য প্রতীক ব্যবহার করে সঠিক উত্তর লিখলেও কোনও নম্বর পাওয়া যাবে না। যেমন, যদি কোনও প্রশ্নে উল্লেখ থাকে PQR ত্রিভুজ, তবে উত্তরপত্রে PQR ত্রিভুজই উল্লেখ করতে হবে। প্রতীকের উল্লেখ না থাকলে পরীক্ষার্থী নিজের পছন্দ মতো প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে।
উপপাদ্য
উপপাদ্য অনুশীলনের সময় প্রথমে বইতে ব্যবহৃত প্রতীক ব্যবহার করে উপপাদ্যটি রপ্ত করতে হবে। তারপর বারবার বিভিন্ন প্রতীক ব্যবহার করে উপপাদ্যটি খাতায় লিখতে হবে এবং প্রয়োজনে কাউকে দেখিয়ে নিতে হবে। এই ভাবে প্রতিটি উপপাদ্যই বারবার খাতায় লিখে অভ্যাস করতে হবে। মনে রাখবে, প্রশ্নপত্রে যদি নির্দিষ্ট প্রতীকের উল্লেখ থাকে, উত্তরপত্রেও সেই বিশেষ প্রতীক ব্যবহার করতে হবে।
সম্পাদ্য
সম্পাদ্যর ক্ষেত্রে প্রদত্ত মান দেওয়া থাকলে, যেমন বাহুর দৈর্ঘ্য, কোণের মান ইত্যাদি, তবে সেই হিসাবেই চিত্র অঙ্কন করতে হবে। চিত্র অঙ্কন পেনসিল দিয়ে করা ভাল। জ্যামিতিক চিত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন যাতে হয়, সেদিকে বিশেষ যত্নবান হতে হবে।
ত্রিকোণমিতি
ত্রিকোণমিতির উচ্চতা-দূরত্বের প্রশ্নের উত্তরের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সঠিক ছবিটি আঁকতে হবে। সঠিক ছবি ছাড়া উত্তর অসম্পূর্ণ থেকে যাবে এবং কোনও নম্বর পাওয়া যাবে না।
উপসংহারে শুভেচ্ছা
মাধ্যমিক পরীক্ষার রুটিন পাওয়ার পরই একটা জায়গায় পরিষ্কার ভাবে লিখে পড়ার টেবিলের সামনে টাঙিয়ে রেখো। আর টেস্ট পরীক্ষার পর বাড়িতে নিজের পড়ার একটা রুটিন করে ফেলো। সেই রুটিনে প্রতিদিন যেন গণিতের জন্য কিছু সময় থাকে। কারণ গণিত রোজ অভ্যাস করতে হয়। খুব ভাল হয় শেষ দিকে প্রতিদিন Test Paper থেকে একটা করে পেপার ঘড়ি ধরে সমাধান করলে। এতে সময়জ্ঞান বাড়বে। আর নিয়মিত অভ্যাস করলে অঙ্ক আর আতঙ্ক মনে হবে না। আগামী বছরের সমস্ত মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে জানাই আগাম আন্তরিক শুভেচ্ছা।
No comments:
Post a Comment