বছরখানেক আগের শিল্ডের একটা ম্যাচের কথা মনে পড়ছে। আমি তখন ইউনাইটেডের কোচ। আমাদের সেমিফাইনালে উঠতে ইস্টবেঙ্গলকে শুধু হারালেই চলবে না। চার গোলে হারাতে হবে। সে দিন আমার ছেলেরা দু’গোল খেয়েও পাল্টা চার গোল দিয়ে জিতেছিল।
বুধবার সে রকমই একটা জবরদস্ত ম্যাচ দেখব বলে টিভির সামনে বসেছিলাম। আশা ছিল তিন গোলে পিছিয়ে থাকলেও ঘরের মাঠে প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক খেলে হাবাসের টিম ঠিক ফাইনাল চলে যাবে। হিউমরা মাঠে আক্রমণের ঝড় বইয়ে দিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু শেষরক্ষা হল কই?
তার মানেই এই নয় যে কলকাতা কোচ একজন নিশ্চেষ্ট মানুষ। আর চেন্নাইয়ের সঙ্গে যুঝবার ক্ষমতা নেই ওঁর ছেলেদের। বরং আমি তো এ বার আইএসএলে কলকাতার পারফরম্যান্স দেখার পর বলব, আট দলের মধ্যে ওরাই অন্যতম সেরা দল আর ট্রফি জেতার অন্যতম দাবিদার ছিল। সব পজিশনেই কিছু দুর্দান্ত ফুটবলার খেলেছে। অগাস্টিন, তিরি, গ্যাভিলান, হিউম। তাই লিগ টেবলে একটা সময় ছয় নম্বরে নেমে গেলেও সেমিফাইনালের দৌড়ে প্রবল ভাবে ফিরতে পেরেছিল। আর ওদের কোচ দলটার মধ্যে একটা ভারসাম্য রেখেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। শেষ বেলায় জিতেও মার খেয়ে গেলেন ধারাবাহিকতা আর সামান্য কিছু পরিকল্পনার অভাবে।
বুধবার হাবাস ৩-৫-২ ছকে  আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে গিয়েছিলেন। সেটাকে খারাপ বলছি না। কিন্তু সে ক্ষেত্রে দুই সাইডব্যাককে পাল্লা দিয়ে ওভারল্যাপে যেতে হয়। যেটা মোহনরাজ পারছিল না। এই ধরনের ম্যাচে যেখানে আমাকে দুই বা তার চেয়েও বেশি গোলে জিততে হবে, সেখানে বরং ৪-৩-৩ ছকে যাওয়াই ভাল। তা হলে মাতেরাজ্জিদের ডিফেন্স সারাক্ষণ কলকাতার আক্রমণের সময় সাত জন ফুটবলারকে সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেত।
আমার মতে বুধবার হাবাসের দরকার ছিল সত্তর শতাংশ আক্রমণের সঙ্গে তিরিশ শতাংশ রক্ষণের মিশেল। কিন্তু সেটা হয়নি। এরিয়াল বলের দখল নিতে কলকাতার দোনোমোনো করা বা মাঝমাঠে দুর্বল কভারিংয়ের সুযোগে নিজেরা বল হোল্ড করে সময়টা ঠিক নষ্ট করে ফেলছিল চেন্নাই। যে সময়টা এই ম্যাচে আরও বেশি করে দুর্মূল্য ছিল।
জানি না পস্টিগার ফিটনেসের কী অবস্থা ছিল বুধবার। আমি কোচ হলে কিন্তু ওকে নামিয়ে দিতাম। চেন্নাই কিছুটা হলেও চাপে থাকত। একটা কথা বুঝে পেলাম না, পস্টিগা সেই  অক্টোবর একেবারে গোড়ায় চোট পেয়ে ইউরোপে গেল, তার পর চিকিৎসা করিয়ে মাঝ নভেম্বরে  ফিরে এল। তার পরেও তিন সপ্তাহের বেশি কলকাতা টিমের সঙ্গে কাটিয়েও সুস্থ হতে পারল না! যেখানে কিনা সেই দলে এত বিদেশি ফিজিও, সাপোর্ট স্টাফ! কলকাতাকে এই জায়গাটায় বিরাট মাশুল গুণতে হল এ বার।
হাবাস সেমিফাইনালে লেকিচকে নামিয়ে ওর উচ্চতাটা কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন। সেটা সফলও হয়েছে। কিন্তু শেষের দিকে ভালদোকেও নামিয়ে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ালে ২-০-টা ৩-০ হত না কে বলতে পারে? আমার মনে হয়, গত বার  চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় কলকাতার স্প্যানিশ কোচ এ বার একটু আত্মতুষ্ট হয়ে পড়েছিলেন। না হলে, প্রথম লেগের সেমিফাইনালে পুণের ছোট মাঠের সুবিধে কলকাতা কেন নেবে না?
সে দিন ডিফেন্স সংগঠন এক দিকে যেমন ঠিক হয়নি, তেমনই ছোট মাঠে উইং প্লে শক্ত কাজ বুঝেও গোল টার্গেট করে কলকাতার ফুটবলাররা অনেক বেশি শট নেবে না কেন? এখনও নোটবুক খুলে দেখছি, সে দিন কলকাতা চেন্নাইয়ের গোলে গোটা ম্যাচে দশটাও শট নেয়নি। যেটা পুণের ওই ছোট মাঠে বিপক্ষের জন্য মোক্ষম দাওয়াই হত।
লিগে দুর্দান্ত উঠে দাঁড়ানোর পরেও হাবাসের পুণে সেমিফাইনালের ভুলটা ভুলটা বড় হয়ে গিয়েছে। আর একটা কথা এখন খুব মনে হচ্ছে আমার। গত বারের চ্যাম্পিয়ন টিমের ফিকরুর সঙ্গে সমস্যা থাকায় তাঁকে না হয় এ বার নেননি হাবাস। কিন্তু গত বার দুর্দান্ত গোলকিপিং করা বেটেকে কেন ছেড়ে দিলেন কলকাতা কোচ, আমার বোধগম্য হয়নি। এ রকম কিছু ভুল সিদ্ধান্তও দিনের শেষে হাবাসের কাছে বুমেরাং হয়ে গিয়েছে।