Monday, November 9, 2015

বদলাচ্ছে আবহাওয়া, সরাচ্ছে পর্বতও!

রোজ বদলাচ্ছে পৃথিবীর জলবায়ুর মেজাজ মর্জি। হদিশ পেতে হিমশিম খাওয়ার জোগার বিজ্ঞানীদের। সংখ্যা বাড়ছে তাদের কপালের ভাঁজে। কোথাও ভীষণ গরম তো কোথায় আচামকা কনকনে ঠাণ্ডা। বন্যা ভাসিয়ে দিচ্ছে অথবা ভূমিকম্প এক লহমায় গ্রাস করছে সবকিছু। মাঝ সমুদ্রে বিনা নোটিশে জাগছে ঝড়। কয়েক ঘণ্টার প্রলয় নাচনে তছনছ করে দিচ্ছে সব কিছু। বদলাচ্ছে স্থানীয় জলবায়ুও। আবহাওয়ার এই বেয়ারাপনার কারণ এখনও অজানা! আর ঠিক এখানেই কিছুটা আশার আলো দেখালেন সিনসিনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ ইভা এঙ্কেলম্যান। কারণ অনুসন্ধানের দিকে খানিকটা এগোলেন। জানালেন, পৃথিবী এবং স্থানীয় আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে পর্বতশ্রেণীর অভ্যন্তরীণ টেকটোনিক প্লেটের চলন ভীষণ ভাবেই সম্পর্কযুক্ত। খানিকটা, মহম্মদের পর্বতের দিকে এগোনো আর পর্বতেরও হিসেব উল্টিয়ে মহম্মদের দিকে হাঁটা লাগাবার মত জটিল ব্যাপার স্যাপার।
যে ভাবে কোনও পর্বতশ্রেণী বিভিন্ন কারণে ধীরে ধীরে সরে যায়, প্রভাব ফেলে পারিপার্শ্বিক ভূস্তরের উপর, তা বদলে দিতে পারে হাওয়ার গতি, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। ফলে বদলে যেতে থাকে স্থানীয় আবহাওয়া।
অন্য দিকে এই বদলে যাওয়া আবহাওয়া বাড়িয়ে দেয় ক্ষয়। বদলাতে থাকে পর্বতের নীচে টেকটনিক প্লেটের গতি প্রকৃতি।
এঙ্কেলম্যানের কথায়, “পর্বত সৃষ্টি আর ক্ষয়ের দু’টো প্রাথমিক ধাপ আছে। মজার বিষয় এই ধাপ দু’টো একে অপরের সঙ্গে ‘সংঘর্ষে’ জড়িয়ে পড়ে।”
উত্তর আমেরিকায় প্রশান্ত মহাসাগরীয় শুষ্ক উপকূল অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে আছে সেন্ট এলিয়াস পর্বত শ্রেণী।
এই অঞ্চলের দক্ষিণে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আজকাল বেশ বেশী। ফলে ক্ষয়ের মাত্রাও বেশি। এই ক্ষয়ের ফলে সরছে টেকটনিক প্লেট। স্বাভাবিক ভাবেই, সঙ্গে সরছে এই টেকটনিক প্লেটের উপর দাঁড়িয়ে থাকা গোটা সেন্ট এলিয়াসটাই। এবং যার জেরে আরও বদলাচ্ছে স্থানীয় আবহাওয়া।
বেশ কিছু তথ্যে এঙ্কেলম্যান দেখিয়েছেন, ৪০ থেকে ২০ লক্ষ বছরের মধ্যে কী ভাবে এই পর্বতশ্রেণীর মাঝখানের অঞ্চলের চরিত্র বদল হয়েছে। এই ক্রমাগত ক্ষয় আর টেকটনিক প্লেটের নড়ন চড়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নীচের দিকে আবার জমা হয়েছে ক্ষয়ে যাওয়া উপাদানগুলো।
এঙ্কেলম্যান মডেল বলছে, পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন বদলেছে রিওলজি (ভৃপৃষ্ঠে বিভিন্ন পদার্থ,  উপাদানের এক সঙ্গে চলন বা ব্যবহার)। আজ থেকে বহু বহু বছর আগে পৃথিবী অনেক বেশি উষ্ণ ছিল। হিমবাহগুলোর অবস্থান ছিল আরও উঁচুতে। মোটামুটি ২৬ লক্ষ বছর আগে আস্তে আস্তে ঠাণ্ডা হতে থাকে পৃথিবী। আরও জমাট বাঁধতে শুরু করে হিমবাহগুলো, বাড়ে আকারে আয়তনে। বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। স্থবির হয়ে পড়ে।
এখন ফের বদলাচ্ছে আবহাওয়া। হিমবাহগুলো এখন গলছে। ফিরে পেয়েছে গতি। বাড়াচ্ছে ক্ষয়। হিমবাহগুলোর সঙ্গেই নীচের দিকে নেমে আসছে এই ক্ষয়ে যাওয়া পদার্থগুলো। আলাস্কায় দিকে সরছে টেকটনিক প্লেট। চাপ বাড়ছে ভৃ-পৃষ্ঠের অভ্যন্তরে। ইয়াকুটাট প্লেটের উপর জমা পড়ছে পলি। হিমবাহের গতি এবং এই পলি জমা পড়ার পদ্ধতি একে অপরের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে। ফলে সরছে পর্বত শ্রেণী। আলাস্কার মতই একই পরিবর্তন হচ্ছে হিমালয়ের মত পর্বত শ্রেণি গুলোতেও।

No comments:

Post a Comment