এক ইঞ্চি জল ছাড়তে রাজি নয় আমেরিকা! দক্ষিণ চিন সাগরে।
হেগের আন্তর্জাতিক আদালত কাল ফিলিপিন্সের আবেদন শুনতে রাজি হওয়ায় আরও বল বাড়ল আমেরিকার।
সমুদ্রের দখল নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় বিরোধ-বিতর্কে কেন নাক গলানো হল, আজ তার ব্যাখ্যা দিল ওয়াশিংটন। আমেরিকার বক্তব্য, ওই অঞ্চলে উত্তেজনা উত্তরোত্তর বেড়ে যাওয়ায় চিন ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশই চাইছিল সমুদ্রে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি। যা দক্ষিণ এশিয়ার ছোট ছোট দেশগুলির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারে।
ওয়াশিংটন সরাসরি না বললেও, যার অর্থ, বহু দিন পর দক্ষিণ এশিয়ায় হঠাৎ করে পেয়ে যাওয়া ‘দাদাগিরি’র সুযোগটা হাতছাড়া করতে চায়নি আমেরিকা। নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করতে দক্ষিণ কোরিয়া রওনা হওয়ার আগে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব অ্যাশ কার্টার বলেছেন, ‘‘দক্ষিণ চিন সাগরে সমুদ্রের দখল নিয়ে ওই অঞ্চলের দেশগুলির মধ্যে বিরোধ, বিতর্ক চলছে অনেক দিন ধরেই। সমুদ্রের বিতর্কিত এলাকাকে তাদের নিজস্ব এলাকা বলে দাবি করে সুবি ও মিসচিফ রিফের মধ্যে ১২ নটিক্যাল মাইলে বেজিং গোপনে গোপনে কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ গড়ে তোলায় ও সম্প্রতি তার এলাকা আরও বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করায় নিরাপত্তার প্রশ্নে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলি শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। ফিলিপিন্স তার অন্যতম। ওই দেশগুলি মনে করে সমুদ্রে মার্কিন সামরিক উপস্থিতিই তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করতে পারে। আমেরিকা ওই দেশগুলির পাশেই থাকবে।’’
দক্ষিণ চিন সাগরে যে আমেরিকা এক ইঞ্চি জল ছাড়তে রাজি নয়, দিন কয়েক আগে তা বুঝিয়ে দিয়েছিল পেন্টাগনও। জানিয়েছিল, দক্ষিণ চিন সাগরে আমেরিকা আপাতত একটি ডেস্ট্রয়ার (ইউএসএস-ল্যাসেন) পাঠিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেটাই যথেষ্ট নয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দক্ষিণ চিন সাগরে পাঠানো হবে আরও কয়েকটি মার্কিন ডেস্ট্রয়ার।
আজ একই ইঙ্গিত মিলেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব কার্টারের কথাতেও। কার্টার বলেছেন, ‘‘মালয়েশিয়ায় প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনে দক্ষিণ চিন সাগরের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হবে। ওই অঞ্চলের অন্য দেশগুলি কী মনে করছে, তা জানা হবে। আর সেই দেশগুলির মতামতকেই গুরুত্ব দেওয়া হবে।’’ ওই সম্মেলনে চিনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী চাঙ ওয়াঙ্কাঙেরও হাজির থাকার কথা।
ও দিকে, মার্কিন রণতরীর পাল্টা জবাব দিতে ইতিমধ্যেই সমুদ্রে সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে চিন। সাবমেরিন থেকে অতর্কিতে আক্রমণ চালানোর জন্য দক্ষিণ চিন সাগরে অত্যাধুনিক ওয়াইজে-১৮ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র হানা রুখে দেওয়ার ব্যবস্থা মার্কিন রণতরীতে রয়েছে। কিন্তু, চিনের এই নতুন সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র শেষ মুহূর্তে গতিবেগ এমন তীব্র করে নেয় যে, রেডারের পক্ষেও তার অবস্থান নির্ণয় প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে, এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে গেল দক্ষিণ চিন সাগরের উত্তাপ।
ওয়াইজে-১৮ ক্ষেপণাস্ত্র ২৯০ নটিক্যাল মাইল দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। যখন সমুদ্রে ডুবে থাকা সাবমেরিন থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়, তখন এর গতিবেগ থাকে ঘণ্টায় প্রায় ৯৬০ কিলোমিটার। অর্থাৎ শব্দের বেগের চেয়ে সামান্য কম। কিন্তু, সেই সময় বিপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী অস্ত্রশস্ত্রের নাগালের বাইরে থাকে এই ক্ষেপণাস্ত্র। সমুদ্রপৃষ্ঠের কয়েক মিটার উপর দিয়ে ছুটতে থাকা এই ক্ষেপণাস্ত্র বিপক্ষের জাহাজের ২০ নটিক্যাল মাইল দূরে পৌঁছেই আচমকা গতি বাড়িয়ে নেয়। তখন শব্দের গতিবেগের চেয়ে তিনগুণ বেগে ছুটতে থাকে ওয়াইজে-১৮। এই তীব্র বেগের কারণে বিপক্ষের রণতরীতে থাকা রেডার ঠিক মতো নির্ণয় করতে পারে না ক্ষেপণাস্ত্রের অবস্থান। ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েও সঠিক লক্ষ্যে আঘাত হানা সম্ভব হয় না। ফলে ওই ক্ষেপণাস্ত্রকে থামানো যায় না। অর্থাৎ যে রণতরীকে লক্ষ্য করে ওয়াইজে-১৮ ছোঁড়া হয়, তার ধ্বংস প্রায় নিশ্চিত।
তবে তা মোকাবিলার কৌশলও খুঁজতে শুরু করেছে পেন্টাগন। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ খবর পেয়েছে, চিনা নৌবাহিনীর কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল পরিকাঠামো এখনও খুব উন্নত হয়নি। ফলে প্রাথমিকভাবে আক্রমণ চালালেও পাল্টা আক্রমণে এক বার চিনের কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল পরিকাঠামোর ক্ষতি করে দিতে পারলেই আর সহজে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না চিন। ফলে সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রকে কাজে লাগাতেও পারবে না তারা। চিনের সেই দুর্বলতার কথা মাথায় রেখেই কৌশল সাজাচ্ছে পেন্টাগন।
No comments:
Post a Comment