বিয়াল্লিশে এক মরসুমে তিনটে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার তাৎপর্য কী তাঁর নিজের কাছে? মার্টিনা হিঙ্গিসকে নিয়ে মিক্স়়ড ডাবলস চ্যাম্পিয়ন হওয়ার হ্যাটট্রিক করলেও মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা এখনও তাঁর কাছে কী! এই বয়সে শীর্ষ পর্যায়ে খেলা চালিয়ে যাওয়া এবং নিয়মিত সফল হওয়ার পিছনে তাঁর যোগাভ্যাস, প্রার্থনা, ভিসুয়ালাইজেশনের গুরুত্ব কতটা! ব্যক্তিগত জীবনের প্রবল সমস্যার মধ্যেও কোর্টে নিজের টার্গেটে পৌঁছনোর রহস্য? রিও অলিম্পিক এবং তার পর...। সব কিছু নিয়ে কিছুটা সাংবাদিক সম্মেলনে কিছুটা একান্তে মুখ খুললেন লিয়েন্ডার পেজ।
প্র্যাকটিসে লি। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: প্রেম সিংহ।
...আমার কাছে প্রতিটা ট্রফিই স্পেশ্যাল। যে কারণে এ বারের উইম্বলডন মিক্সড ডাবলস ফাইনালের সকালে আমি ফেসবুকে আমার ষোলো বছর বয়সের, উনিশশো নব্বইয়ে জুনিয়র উইম্বলডন সিঙ্গলস চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ছবি পোস্ট করেছিলাম। এ বছর এমন তিনটে জায়গায় আমার পনেরো, ষোলো আর সতেরো নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছি, যার প্রত্যেকটা জায়গা স্পেশ্যাল। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ফাইনালের প্রথম সেটে আমি আর হিঙ্গিস ৩-০ এগিয়ে গেলেও একটা সময় ৩-৩ হয়ে গিয়েছিল। ঠিক সেই সময় কোর্ট থেকে চোখে পড়ল মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা ভিআইপি বক্সে এসে বসলেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে হিঙ্গিসকে বলেছিলাম, ওই দেখো আমার লাকি চার্ম এসে গিয়েছে। এ বার আমরা জিতব। এবং আমরাই শেষমেশ জিতলাম।
ছোটবেলা থেকে উইম্বলডনের গল্প শুনে, স্বপ্ন দেখে অন্য সবার মতো আমিও টেনিস প্লেয়ার হিসেবে বড় হয়েছি। সেই ঐতিহ্যশালী গ্র্যান্ড স্ল্যামে চ্যাম্পিয়ন হওয়া, তা-ও গোটা টুর্নামেন্টে একটাও সেট না হেরে ট্রফি পাওয়া অবশ্যই স্পেশ্যাল। তা ছাড়া উইম্বলডনে এটা আমার পঁচিশতম বছরও ছিল।
ইউএস ওপেনেই গ্র্যান্ড স্ল্যাম টুর্নামেন্টগুলোর মধ্যে আমার জয় সবচেয়ে বেশি। পুরুষদের গ্র্যান্ড স্ল্যাম ডাবলসও আমি সবচেয়ে বেশি জিতেছি নিউইয়র্কে।
এত বছর ধরে টপ লেভেলে সাফল্যের সঙ্গে আমি যে খেলছি তার জন্য আমি যেমন ভাগ্যবান, তেমনই আমি আশীর্বাদধন্য দুই মার্টিনার পার্টনার হয়ে খেলতে পারায়। আমার মতে এই গ্রহের গ্রেটেস্ট মহিলা ক্রীড়াবিদ ওঁরাই দু’জন। সবচেয়ে বড় কথা, জীবনের প্রতি ওদের প্যাশন, মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতাকে চিরকাল শ্রদ্ধা করে যাব। আর টেনিসের স্কিলের কথা বললে, নাভ্রাতিলোভা চ্যাম্পিয়ন সার্ভ-ভলি প্লেয়ার। হিঙ্গিসের আবার সার্ভিস রিটার্ন আমার দেখা সেরা। আমি এক মার্টিনার থেকে সার্ভিস আর অন্য মার্টিনার থেকে সার্ভিস রিটার্ন আরও ভাল ভাবে করতে শিখেছি।
বয়স আমার কাছে স্রেফ একটা নম্বর। আমার ফিটনেস আর সুস্থ থাকার ব্যাপারে আমি এক ধরনের পাগলই। সপ্তাহে এক বা দু’দিন প্রচণ্ড কষ্টসাধ্য ট্রেনিং ওয়ার্কআউট করি। কিন্তু স্প্রিন্ট টানা আর রিফ্লেক্স এক্সারসাইজ বছরে ৩৬৫ দিন করি। সকালে আমার ট্রেনিং চলে আর তার রিকভারি চলে সন্ধেয়। সাঁতার কেটে। সাইকেল চালিয়ে। আমার ট্রেনিং স্টাফ বলে, আমার ভেতর নাকি একটা জন্মগত গতি আছে।
আমার পঁচিশ বছরের সর্বোচ্চ পেশাদার টেনিস জীবনে কয়েকটা বছর খুব কঠিন গিয়েছে। খুব কঠিন সব চ্যালেঞ্জ আমার দিকে এসেছে। শারীরিক, ব্যক্তিগত জীবনে, আর্থিক ভাবে। ১৯৯১, ১৯৯৯, ২০০৩, ২০১২, ২০১৪। নানা কারণে ওই সময়গুলোয় আমাকে আমার নিজের একেবারে অতল গভীরে গিয়ে সমস্যাগুলো থেকে বার হওয়ার রাস্তা খুঁজে বার করতে হয়েছে। তার জন্য যা যা করা দরকার সেগুলো ঠিক ভাবে করতে হয়েছে। আর ততই সেগুলোর ভেতর আরও ঢুকে পড়েছি। যোগাভ্যাস এখন আমি বোধহয় আগের চেয়ে বেশি করি। ফলও পাই।
খারাপ সময়, সমস্যা সবার জীবনেই আসে। সৌভাগ্যবশত আমার চার পাশে কিছু মানুষ আছে যারা আমার ফিটনেস, টেনিস এমনকী আমার ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিও কেয়ার নিয়ে থাকে। দিনের শেষে আমি উপলব্ধি করি, আমার খারাপ সময় এসেছে, যাচ্ছে কিন্তু শেষমেশ সত্যেরই জয় হবে। আমি এটা বিশ্বাস করি। তাই ট্রফিও আমার হাতে ওঠে।
রিও অলিম্পিক্সের পর আর কত দিন খেলব জানি না। রিওতে আমার আর বোপান্নার জুটির ভাল করা উচিত। আমি তার আগের বছরে তিনটে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছি। বপস্ উইম্বলডনে সেমিফাইনাল, ইউএস ওপেনে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে। আমরা দু’জনেই ফর্মে। আমাদের জুটিও ফর্মে থাকবে মনে করি। আর মিক্সড ডাবলসে সানিয়া আমার বা বপস্ যার সঙ্গেই খেলুক, সে জানবে আমার পাশে বিশ্বের এক নম্বর ডাবলস প্লেয়ার রয়েছে। এর চেয়ে ভাল মোটিভেশন কোনও প্লেয়ারের পাওয়া সম্ভব না কি...
No comments:
Post a Comment