আইএসএল-টুতে আটলেটিকো দে কলকাতার সেরা ফুটবলার। জোড়া হ্যাটট্রিক সহ ১১ গোল। এমনকী বুধবার বিদায়বেলায় আইএসএলের মালকিন নীতা অম্বানী তাঁর ফুটবল দেখে এতটাই মুদ্ধ যে, যুবভারতী ছাড়ার আগে বলে গেলেন, ‘‘আইএসএলের সেরা ম্যাচ দেখলাম। এক সেকেন্ডের জন্য নড়তে পারিনি। বিশ্বাস করুন, হিউমের গোলটা এখনও চোখে ভাসছে!’’
আইএসএল মালকিনের মতোই হিউমকে চোখের আড়ালে যেতে দিতে চাইছে না আটলেটিকো। টিমের সবচেয়ে সফল স্ট্রাইকারকে যে করেই হোক পরের মরসুমে টিমে ধরে রাখতে মরিয়া এটিকে কর্তারা। সরাসরি না বললেও, এটিকে-র সচিব সুব্রত তালুকদার বললেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী পাঁচজন বিদেশি আর পাঁচজন স্বদেশি ফুটবলার ধরে রাখতে পারব আমরা। এই নিয়ম অবশ্য ২০ ডিসেম্বরের পরে বদলে যেতে পারে। তবে হিউমের প্রতি আমাদের একটা দুর্বলতা তো আছেই।’’ হিউম মাঠ ছেড়ে যাওয়ার সময় সুব্রতবাবু তাঁকে জড়িয়ে কেঁদেও ফেললেন।
যদিও এটিকে টিমের অন্দরে দু’রকম মতামত। হিউমের পারফরম্যান্স নজর কাড়লেও, তাঁর বয়স নিয়ে একটা খচখচানি আছে। আবার অনেকের মত হিউমকে ছেড়ে দিলে ফিকরু আর বেটের মতো ভুলের পুনরাবৃত্তি না হয়ে যায়। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে ফাইনালের পরে আইএসএল কমিটি কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার উপর। নিয়ম বদলালে এক রকম স্ট্র্যাটেজি। নিয়ম না বদলালে এক রকম। সুব্রতবাবু বলছিলেন, ‘‘যদি ফ্রি প্লেয়ার নিয়ম চালু হয়ে যায় তা হলে ফুটবলার বাছতে অনেক সুবিধা হবে। যে কেউ যে কোনও টিমের ফুটবলার নিতে পারবে। আবার ছাড়তেও পারবে।’’
তবে নতুন নিয়ম যাই হোক না কেন, হিউমের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে এটিকে-তে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হবে, সেটা স্পষ্ট। আর হিউম? তিনি বিন্দাস ঢঙে বলে গেলেন, ‘‘এখন সবার আগে বাড়ি ফিরতে চাই। আমার মেয়েদের কথা খুব মনে পড়ছে। তার পর পরেরটা ভাবব।’’ মুখে কিছু না বললেও ঘনিষ্ঠমহলে কানাডিয়ান স্ট্রাইকার নাকি পরের বারও এটিকে-তে থাকার ব্যাপারে ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। এমনকী এক কাছের বন্ধুকে এও বলেছেন, ‘‘কলকাতার পরিবেশটাই আলাদা। এখানে আরও কিছু দিন ফুটবল খেলতে পারলে ভাল লাগবে।’’ কিন্তু এটিকে কর্তারা জানেন না, বিদেশের নতুন ক্লাবে খেলার পর পরের মরসুমে তাঁকে কত টাকা দিতে হবে?

হিউম ছাড়া আরও দুই বিদেশি ফুটবলারকে ধরে রাখতে চাইছে আটলেটিকো। দ্যুতি ও গ্যাভিলান। দু’জনে ইতিমধ্যেই এটিকে কর্তাদের ‘গুড বুকে’ নাম লিখিয়ে ফেলেছেন। বাকি কোন তিন জনকে ‘ব্লক’ করে রাখা হবে তা কোচের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করতে চান কর্তারা। স্বদেশিদের মধ্যে আরাতা, অর্ণব মণ্ডল এবং অগাস্টিন ফার্নান্ডেজ প্রায় পাকা। অমরিন্দরের সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি করার কথা ভাবছেন কর্তারা। এ দিন শেষ গোলটা পঞ্জাব কিপারের দোষে খাওয়া সত্ত্বেও। তবে আইএসএল নিলামে কলকাতার সবচেয়ে দামি স্বদেশি রিনো অ্যান্টোকে ছেড়ে দেওয়া প্রায় নিশ্চিত। নবি, ক্লিফোর্ড মিরান্ডা, সুশীল কুমার, নাদং ভুটিয়া, মোহনরাজের  মতো ফুটবলারদের ছাঁটাই করে দেওয়া হচ্ছে। এটিকে কর্তারা অবশ্য গোয়ায় ফাইনালের আগে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন না।
একটা সিদ্ধান্ত অবশ্য ইতিমধ্যেই নিয়ে ফেলেছেন এটিকে কর্তারা। আর সেটা কী? সুব্রতবাবু বলছিলেন, ‘‘মার্কি নিয়ে আমাদের ভাগ্য খুব খারাপ। গতবারও ভুগিয়েছে। এ বারও ভুগলাম। সবার আগে একজন ভাল মার্কি ফুটবলার খুঁজতে হবে।’’
এটিকে-র ভবিষ্যৎ যাই হোক না কেন, ২০ ডিসেম্বরের ভবিষ্যদ্বাণী যুবভারতীতে করে ফেললেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ক্যামেরার সামনে কিছু না বললেও, আড়ালে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি ইশারায় শুধু বলেন, ‘‘জিতবে গোয়া।’’ সৌরভ যে একা গোয়ার ওপর বাজি ধরেছেন, তা কিন্তু নয়। হিউম-নাতোরাও গোয়াকেই এগিয়ে রাখছেন। বাস থেকে হাত নাড়তে নাড়তে বলে গেলেন, গো-য়া...গো..য়া।