মঞ্চ সাজানো ছিল এক জনের জন্য। কিন্তু নায়ক হয়ে গেলেন আর এক জন। একশোর রাতে মেসি হারিয়ে গেলেন ৬০ গজের এক মিসাইলের সামনে।  
সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল, নিজের শততম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে কোনও স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দেবে ফুটবল ঈশ্বরের বাঁ পা। ম্যাজিক তো দেখা গেল। কিন্তু মেসির বাঁ পা থেকে নয়। আলেসান্দ্রো ফ্লোরেঞ্জির ডান পা থেকে।
প্রথমার্ধের ৩১ মিনিট। ঠিক দশ মিনিট আগেই সুয়ারেজের করা গোলে ১-০ এগিয়েছে বার্সা। প্রথমে বার্সা ডিফেন্ডার ইয়র্দি আলবার থেকে বল কেড়ে নেন ফ্লোরেঞ্জি। যার পরে সামনে কাউকে দেখতে না পেয়ে  ৬০ গজ দূর থেকে শট মারেন ইতালিয়ান মিডফিল্ডার। যা অবিশ্বাস্য ভাবে সোজা গিয়ে জড়িয়ে যায় বার্সার জালে। ফ্লোরেঞ্জি নিজেও যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ঠিক কী ঘটে গিয়েছে। মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। গোটা বার্সেলোনা টিম হতভম্ব। লুইস এনরিকে স্তম্ভিত। তার পরেই শুরু হয়ে যায় রোমার উৎসব। মাঠে, গ্যালারিতে।
ফ্লোরেঞ্জির উচ্ছ্বাস ও যে ভাবে এসেছে গোল।
মাঠে ৯০ মিনিট থাকা বার্সা ডিফেন্সের অন্যতম স্তম্ভ জেরার পিকে এতটাই মজে গিয়েছিলেন বিপক্ষ ফুটবলারের পা থেকে আসা গোলে, যে ম্যাচের পর তিনি গোলের ভিডিও দেখতে বসে যান। রোনাল্ডো, তেভেজদের মতো ফরোয়ার্ডদের বিরুদ্ধে খেলা ডিফেন্ডার পরে টুইট করেন, ‘‘আমার ফুটবল কেরিয়ারে দেখা সেরা গোল। যখন আবার দেখলাম তখন বিশ্বাসই হচ্ছিল না।’’ বার্সা কোচ এনরিকেও নিজের নাম লিখিয়ে নিলেন ফ্লোরেঞ্জির ফ্যান ক্লাবে। ‘‘ফ্লোরেঞ্জির গোলটাই ম্যাচটা ঘুরিয়ে দিল। দারুণ ছিল,’’ বলছেন এনরিকে। শততম ম্যাচে মেসিকে ম্লান করে দেওয়া তারকা ফ্লোরেঞ্জিও স্বীকার করলেন, ‘‘গোলটা দেখে গায়ে আমার নিজেরই গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। আমি দেখলাম জেকোকে মার্ক করে রেখেছে। তাই ওকে পাস না দিয়ে সরাসরি গোলে মারলাম। গোলটা দেখে নিজেই মুখ ঢেকে ফেলেছিলাম।’’
রোমার ঘরের মাঠে যাঁর নায়ক হওয়ার কথা ছিল, তিনি গোল করার চেয়ে বেশি নজর দিয়েছিলেন গোল করানোর দিকে। কিছু দিন আগেই মেসি বলেছিলেন, ‘‘আমি এখন মাঝমাঠেই বেশি খেলব।’’ দেখা যাচ্ছে এখন সেই গেমপ্ল্যানেই যাচ্ছেন এলএম টেন। রোমার বিরুদ্ধে গোটা ম্যাচেই মাঝমাঠে নেমে খেললেন। সুয়ারেজ, নেইমারকে বারবার বল বাড়িয়ে যাচ্ছিলেন। তার মধ্যে একটা শট পোস্টেও মারলেন। ব্যস ওইটুকুই।  ম্যাচের পর ফেসবুকে মেসির পোস্ট, ‘‘আমি খুব খুশি বিশ্বের সেরা ক্লাব টুর্নামেন্টে একশোটা ম্যাচ খেলতে পেরে। অনেক স্মরণীয় মুহূর্ত উপভোগ করেছি। আশা করব, ভবিষ্যতেও অনেক কিছু উপভোগ করতে পারব।’’ 
দু’পয়েন্ট নষ্ট করা ছাড়াও আবার লুক শ-র মতো অবস্থা হল বার্সার রাফিনহার। পরিবর্তে নামার চার মিনিটের মধ্যেই স্ট্রেচার করে মাঠ ছাড়তে হল বার্সা ডিফেন্ডারকে। বিপক্ষের কড়া ট্যাকলের শিকার হয়ে।
পরে ক্লাব ডাক্তাররা পরীক্ষা করার পরে দেখা যায় রাফিনহার লিগামেন্ট ছিড়ে গিয়েছে। অস্ত্রোপচার ছাড়া গতি নেই।