রিও অলিম্পিকে ভারতের যেটা সম্ভাব্য পদক ইভেন্ট সেই কুস্তির ৭৪ কেজি বিভাগে সুশীল কুমার, না নরসিংহ যাদব— কে নামবেন সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তা বোধহয় কাটতে চলেছে।
এমনিতে গত সেপ্টেম্বরে লাস ভেগাসে বিশ্ব কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপে নরসিং ৭৪ কেজিতে ব্রোঞ্জ জিতে রিওর টিকিট জোগাড় করে নিয়েছেন। এবং নিয়ম মতো আগামী বছর অলিম্পিকে কুস্তির ৭৪ কেজিতে ভারত থেকে নরসিংহের প্রতিনিধিত্ব করার পাশে সিলমোহর পড়ে যাওয়ার কথা।
কিন্তু ব্যাপারটাকে মোটেই অত সরলীকরণ করলে চলবে না। সাম্প্রতিক চোটের কারণে সুশীল কুমার আর যোগেশ্বর দত্তর লাস ভেগাসে অনুপস্থিতিতে সেখানে পদকজয়ী নরসিংহ এ দিন মহারাষ্ট্রের যোগেশ্বরী থেকে ফোনে বললেন “আমার মনে হয় সুশীল আর যোগেশ্বরও চেষ্টা করবে রিওর ছাড়পত্র জোগাড়ের।”
বলেই ফোন কেটে দিলেন নরসিংহ। আবার ফোন করলে বললেন “আমাকে মাফ করবেন। এর বেশি আর কিছু বলব না।” এর পর নরসিংহের ব্যক্তিগত কোচ জগমল সিংহকে ফোনে ধরায় বললেন, “শুনুন, রিওতে ৭৪ কেজিতে নরসিংহ ছাড়া এ দেশ থেকে অন্য কেউ নামবে না। সুশীলকে পরের অলিম্পিকে যেতে গেল ৭৪ কেজি বাদ দিয়ে অন্য কোনও ক্যাটেগরিতে যেতে হবে। তা ছাড়া চার বছর আগে লন্ডন অলিম্পিকে সুশীল তো ৬৬ কেজিতে পদক জিতেছিল। যদিও এ বার সেই ওজনের বিভাগটা অলিম্পিকে নেই। তবু নিয়ম মতো ৭৪ কেজিতে নরসিংহ ছাড়া আর কেউ নামতে পারে না। কারণ ও-ই এই বিভাগে রিওতে নামার ছাড়পত্র পেয়েছে। আর নিয়ম মতো একটা বিভাগে একটা দেশ থেকে এক জন কুস্তিগীরই অলিম্পিকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। সুতরাং এই প্রশ্নটা কেন উঠছে বুঝতে পারছি না।”
ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সচিব বিনোদ তোমার-ও ফোনে বললেন “নরসিংহ আর ওর কোচ জগমল সিংহ ঠিকই বলছেন। ৭৪ কেজিতে নরসিংহ রিওতে আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। সুশীল আর যোগেশ্বরকে অন্য কোনও বিভাগে অলিম্পিকের জন্য কোয়ালিফাই করতে হবে।”
গত দু’টো অলিম্পিক থেকে ভারতকে পদক এনে দেওয়া সুশীল এবং গত অলিম্পিকে পদকজয়ী যোগেশ্বর— এমন দুই মহাতারকা পালোয়ানকে বসিয়ে যিনি রিওতে নামতে চলেছেন, সেই নরসিংহকে তাঁর কোচ জগমল এক জঙ্গলে আবিষ্কার করেছিলেন! তখন নরসিংহের বয়স মাত্র ১০। সেটা মহারাষ্ট্রের যোগেশ্বরীর জঙ্গল। নরসিংহের বাবা পঞ্চম যাদব উত্তরপ্রদেশের নিমা গ্রাম থেকে যোগেশ্বরীতে এসে দুধের ডিস্ট্রিবিউশনশিপের ব্যাবসা শুরু করেছিলেন। আবার নরসিংহের একটু নামডাক হতেই নিজের গ্রামে ফিরে গিয়ে চাষবাস শুরু করেছেন।
যোগেশ্বর-সুশীলের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
|
তত দিনে নরসিংহের কোচ তাঁকে কান্ডিভেলির সাই সেন্টারে নিয়ে গিয়েছেন। তার পর গত ১৫ বছর ধরে চলছে মাজাঘষা। কোচ জগমল ফোনে বলছিলেন, ‘‘নরসিংহের দশ বছর বয়স থেকেই দেখে আসছি ওর মত ডিসিপ্লিনড্ ছেলে খুব কম আছে। ওর দাদা বিনোদও আমার কাছে ছিল। কিন্তু বেশি সাফল্য না পাওয়ায় সে কুস্তি ছেড়ে দিয়েছে। দাদার মতো নরসিংহও প্রথমে রেলে চাকরি করত। রেল ছেড়ে দু’বছর হল মহারাষ্ট্র পুলিশে ডিএসপি হয়েছে।”
নরসিংহের আন্তর্জাতিক উত্থান ২০১০ দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জেতার সুবাদে। ২০১২ অলিম্পিকে অবশ্য প্রথম রাউন্ডে হেরে যান। ২০১৪ এশিয়ান গেমসে জেতেন ব্রোঞ্জ। আর এ বছর বিশ্ব কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপে পদক জেতার সৌজন্যে রিও অলিম্পিকে প্রথম ভারতীয় কুস্তিগীর হিসেবে যাওয়ার যোগ্যতা পেয়ে তাক লাগিয়ে দেন।
No comments:
Post a Comment